দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। এজন্য তারা লাগাতার অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচিগুলো ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, নাশকতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সারা দেশে অন্তত ৩ হাজার ৭৮৬টি মামলা হয়। এর প্রায় সব আসামিই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। মামলাগুলো তদন্ত করে ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এজন্য তারা এই মামলাগুলোতে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এ অবস্থায় অভিযোগপত্র দেওয়া মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া মনিটরিং করতে পুলিশকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলোর তদারকিসংশ্লিষ্ট সরকারের সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফশিল ঘোষণার পর থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে নির্বাচনি সহিংসতায় মারা যায় ১২৩ জন। এটি দেশের ইতিহাসে নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এছাড়া নির্বাচনের দিন সহিংসতায় ১১ জেলায় নিহত হন ১৯ জন। যা নজিরবিহীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এই নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় ৩ হাজার ৭৮৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ৩ হাজার ৫৪৯টি মামলায়। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় ১৮৬টি মামলায়। অর্থাৎ পুলিশের তদন্তে এই মামলাগুলো থেকে আসামিরা দায়মুক্তি পেয়েছেন। বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ৫১টি মামলা। এই হিসাব চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত।
২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। এরপরই আন্দোলনে নামে বিএনপি-জামায়াত জোট। তারা নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণায় অনড় থাকে। দাবি আদায়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ঘিরে ২০১৩ সালের পুরো সময়েই উত্তপ্ত থাকে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই সময়কালে ওই সময়ের সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে মামলাগুলোর দিকে নজর রাখছিল সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত এক সভা হয়। সেখানে সহিংসতার মামলাগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মামলাগুলোর তদন্তসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনন্স) মো. আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, মামলাগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করে নিষ্পত্তি করতে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। জননিরাপত্তা বিভাগের সভা থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতার মামলাগুলোর বিষয়ে চারটি সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো-তদন্তাধীন মামলাগুলোর তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। যেসব মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া মনিটর করতে হবে এবং জননিরাপত্তা বিভাগকে অবহিত করতে হবে। স্থগিত মামলাগুলো আলোচনা করে সচল করার ব্যবস্থা করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা উল্লেখ করে প্রতিমাসে প্রতিবেদন দিতে হবে। আর এগুলো বাস্তবায়ন করবে পুলিশ এবং এ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটি।