ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মামলার বাদী ভুক্তোভোগী কিশোরীর জন্ম দেওয়া সন্তানের সঙ্গে বড় মনির ডিএনএ না মেলায় জামিন বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ সোমবার ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপনের পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিশোরীর জন্ম দেওয়া সন্তানটির জন্মদাতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনি নন। ডিএনএ রিপোর্টে সেটিই উঠে এসেছে। রিপোর্টটি দাখিলের পর শুনানি শেষে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।
ফলে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকছে এবং তার কারামুক্তিতে আইনি কোনো বাধা থাকছে না।’
বড় মনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির ভাই ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব। চলতি বছর ৫ এপ্রিল রাতে এক কিশোরী বাদী হয়ে গোলাম কিবরিয়া বড় মনির নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে। মামলায় বলা হয়, ধর্ষণের কারণে বাদী (কিশোরী) অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন।
মামলায় গোলাম কিবরিয়া বড় মনির পাশাপাশি তার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়া শহরের আদালতপাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে ওই কিশোরীকে ডেকে নেন। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য গোলাম কিবরিয়া তাকে ভয়ভীতি দেখান। আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় তাকে।
একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ রাত আটটার দিকে গোলাম কিবরিয়া ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে একটি বাড়িতে যান। সেখানে গোলাম কিবরিয়া তাকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় বড় মনি আবার তাকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনা জানার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারধর করেন। পরে দিবাগত রাত তিনটার ওই কিশোরীকে বাড়িতে রেখে আসা হয়।
এ মামলায় বড় মনি ও তার স্ত্রী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলেও পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত সে জামিন স্থগিত করে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত নামঞ্জুর করে বড় মনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে হাইকোর্টে আবেদন করে জামিন নেন বড় মনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সে জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালত বড় মনির ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে। সে ধারাবাহিকতায় ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়। শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে বড় মনির জামিন বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত।