ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

বাতিলের খাতায় নাম উঠে যাওয়া নাজমুল ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পে। এর কিছু কৃতিত্ব তো পেতেই পারেন নির্বাচকরা। নির্বাচকদের প্রতি তাই নাজমুলের কৃতজ্ঞতা, ‘নির্বাচক, বোর্ড ও আগের কোচিং স্টাফ (ধন্যবাদ) পাবেন। অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ কিন্তু আমি পেয়েছি।

তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ, কারণ বিশ্বাসটা আমার ওপর ছিল। তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে।’

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

নাজমুল হোসেন শান্ত। তীব্র সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন একসময়।

তবে সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার সময়টা পেছনে ফেলতে পেরেছেন নাজমুল। গত জানুয়ারিতে বিপিএল, এরপর ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফর এবং সর্বশেষ এশিয়া কাপ—এই বছর নাজমুলকে হাসতে শিখিয়েছে।

বিপিএলে সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। বিপিএলের পরপরই ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতে।

এ বছর নাজমুলের ব্যাটে রানের ফল্গুধারা ছুটেছে অন্য দুই সংস্করণেও। ওয়ানডেতে সব মিলিয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৭.৮৪। স্ট্রাইক রেট ৮৬.৫০। ১৩ ইনিংসে ব্যাট করে ৬২২ রান করেছেন। চারটি ফিফটির সঙ্গে দুই সেঞ্চুরি।

যার সর্বশেষটি লাহোরের উত্তপ্ত গরমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এর আগের ম্যাচেই পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৯ রানের ইনিংস। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয়! সুসময়টা কেড়ে নিল চোট। দুই ম্যাচ শেষেই দেশে ফিরতে হলো শান্তকে। চোটে না পড়লে কে জানে নাজমুলের ব্যাটে চড়ে হয়তো বাংলাদেশ এশিয়া কাপটা আরেকটু ভালোভাবে শেষ করতে পারত!

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

এ বছর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল। টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরিও এ বছর দেখেছেন বাঁহাতি ব্যাটার। দিনের পর দিন রানের জন্য সংগ্রাম করেছেন। আউটের পর মলিন অবয়বে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন। তাঁর আউটে গ্যালারি থেকে করতালিও ভেসে এসেছে। সেসব নাজমুলের কান অবধি না পৌঁছার কোনো কারণ নেই। আক্ষেপ করে তাই কিনা একদিন বলেও ফেললেন, ‘আমার মনে হয়, আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি না, প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটার!’ নাজমুল এই কঠিন সময়কে সঙ্গী করেছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরে তখনকার কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে ড্রেসিংরুমের আবহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নাজমুলকে নিয়েছিলেন। কিন্তু একের পর এক ক্রিকেটারের চোট সেই সফরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়ে যায় শান্তর। ক্রাইস্টচার্চে সেই টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে (১৮, ১২) ৩০ রান আসে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে।

এরপর ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকও হয়ে যায় নাজমুলের। টেস্টে তা-ও মাঝে মাঝে রানের দেখা পেয়েছেন। কিন্তু অন্য দুই সংস্করণে নিজেকে মেলে ধরতে বেশ হিমশিমই খেয়েছেন নাজমুল। এমনও শুনতে হয়েছে, প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ট্যাগ লাগিয়ে আর কত সুযোগ পাবেন নাজমুল? তিনি নিজে শুনেছেন চতুর্দিক থেকে তির্যক মন্তব্য ছুটে গেছে নির্বাচক প্যানেলের দিকে। বাতিলের খাতায় নাম উঠে যাওয়া নাজমুল ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পে। এর কিছু কৃতিত্ব তো পেতেই পারেন নির্বাচকরা। চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর নির্বাচকদের প্রতি তাই নাজমুলের কৃতজ্ঞতা, ‘নির্বাচক, বোর্ড ও আগের কোচিং স্টাফ (ধন্যবাদ) পাবেন। অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ কিন্তু আমি পেয়েছি। তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ, কারণ বিশ্বাসটা আমার ওপর ছিল। তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে।’ সেই দূরে দিগন্তের কিছু রেখা কি বিশ্বকাপেও দেখা যাবে?

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

LEAVE A REPLY