মুশফিকুর রহিম
এশিয়া কাপ শেষে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৩৭.১২। বিশ্বকাপে সেটা আরো বেশি ৩৮.১৩। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতবধের ম্যাচে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেছিলেন মুশফিক। ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে জেতার জন্য দরকার ছিল একজনের উইকেটে টিকে থাকা।
১০৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে সে কাজটিই করেছিলেন মুশফিক।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, কুমার সাঙ্গাকারা, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ছিলেন ক্রিকেটে। তাঁদের কেউই গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি পাননি। ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে কীর্তিটা মুশফিকুর রহিমের।
তাঁর তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির দুটি উইকেটরক্ষক হিসেবে। সবচেয়ে কম ১৬ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী লর্ডসে টেস্ট খেলা মুশফিককে বলা হয় ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। দলের চাহিদামতো ব্যাট করতে পারেন টপ অর্ডার থেকে ৬ নম্বর পর্যন্ত, হতাশ করেননি কোথাও। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি—সব ফরম্যাটেই রেখেছেন নিজের ব্যাটিংয়ের ছাপ।
বড় মঞ্চের বড় খেলোয়াড় হওয়ায় বিশ্বকাপেও মেলে ধরেছেন নিজেকে। এশিয়া কাপ শেষে তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৩৭.১২। বিশ্বকাপে সেটা আরো বেশি ৩৮.১৩। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতবধের ঐতিহাসিক ম্যাচে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেছিলেন মুশফিক। ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে জেতার জন্য দরকার ছিল একজনের উইকেটে টিকে থাকা।
১০৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে সেই কাজটিই করেছিলেন মুশফিক। সেই বিশ্বকাপেই স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। মুশফিকের ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে শেষ পর্যন্ত স্কোরটা তিন অঙ্ক পার হয়। হাবিবুল বাশারের দল অল আউট ১৩১ রানে।
দেশের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে হতাশই করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। ৬ ম্যাচে করেন মাত্র ৮১ রান। ব্যর্থতার বৃত্তটা ভাঙেন ২০১৫ বিশ্বকাপে। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। শেষ আটে পৌঁছনোর সেই বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৪৯.৬৬ গড়ে ২৯৮ রান করেছিলেন মুশফিক। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ৫৬ বলে ৭১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তাতে বাংলাদেশ পায় ২৬৭ রানের পুঁজি আর ম্যাচ জেতে ১০৫ রানে। ম্যাচসেরার পুরস্কার মুশফিকুর রহিমেরই।
পর পর দুটি ফিফটি স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রানের পাহাড়ে বাংলাদেশ চাপা না পড়ে পায় ৬ উইকেটের জয়। ৪২ বলে ৬০ রানের ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মুশফিকুরের। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে ইংল্যান্ডকে হারাতেই হতো বাংলাদেশের। সেই ম্যাচেও হাসে মুশফিকের ব্যাট। ৭৭ বলে করেন ৮৯ রান আর বাংলাদেশ পায় ২৭৫ রানের পুঁজি। অ্যাডিলেডে উপভোগ্য সেই ম্যাচ বাংলাদেশ জেতে ১৫ রানে।
২০১৯ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপটাই সবচেয়ে সফল মুশফিকের ক্যারিয়ারে। ৮ ম্যাচে ৫২.৪২ গড়ে চার বিশ্বকাপের মধ্যে করেন নিজের সর্বোচ্চ ৩৬৭ রান। বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরিটিও পেয়েছেন সেবার। নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০২ রানে অপরাজিত থেকেও অবশ্য জেতাতে পারেননি দলকে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮১ রানের জবাবে বাংলাদেশে করেছিল ৩৩৩। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ ও আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলেন ৮৩ রানের ইনিংস। এবারও নিশ্চয়ই এমন কিছুর প্রত্যাশা মুশফিকের।