দূর গ্রামেও ভারতেরই বিশ্বকাপ

শহুরে যানজট ঠেলে গাড়ি পুনে-মুম্বাই মহাসড়কে উঠে পড়েছে অনেক আগেই। কিন্তু পথ যেন শেষই হতে চায় না। প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটারের পুনে ক্যান্টনমেন্ট আর মনোরম পাহাড়ি এলাকা পেরিয়ে অবশেষে দেখা মেলে যে গাহুঞ্জে গ্রামের, সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে এমনকি গলদঘর্ম আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার কালাম ফার্গুসনও, ‘এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগল এখানে আসতে!’

দূর গ্রামেও ভারতেরই বিশ্বকাপ

সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্বকাপসংশ্লিষ্ট আরো অনেকের অবস্থাও তাঁর মতোই। শহর ছেড়ে সবাইকে গ্রামে আসতেই হতো।

গাহুঞ্জে গ্রামের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামেই তো আগামীকালের ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। স্বাগতিকরা খেলছে বলে এই ম্যাচের টিকিট সত্যি সত্যিই ‘সোল্ড আউট’ হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করা যাচ্ছে। না হলে অনলাইনে আরো কত ম্যাচের টিকিটই তো ফুরিয়ে গেছে বলে ঘোষণা এলেও গ্যালারির খাঁ খাঁ করা শূন্যতা এই আসরের আবেদন নষ্ট করেছে অনেকটা। অবশ্য খেলার গুণ ও মানে ওয়ানডে ক্রিকেটের সৌন্দর্যটা অটুট আছে ঠিকই।

অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সময় ভালো যাচ্ছে না, কিন্তু তাদের হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেওয়া আফগানিস্তান বিশাল খবরের শিরোনাম হয়েছে। এমনই যে আজ চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি আফগান রূপকথার সম্ভাবনা নিয়েও এক্স-এ বার্তার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। পুনেতে সর্বশেষ বিশ্বকাপ ম্যাচের ইতিহাসও এখানে অঘটন নিয়ে আলোচনা তুলে দিয়েছে।

শেষবার এখানে বিশ্বকাপের ম্যাচ হয়েছিল ২৭ বছর আগে।

তখন অবশ্য খেলা হতো নেহরু স্টেডিয়ামে। তবে স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে টিকিট থেকে আয়ের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এমসিএ স্টেডিয়ামের জন্ম। এই মাঠের জন্য বিশ্বকাপ তাই নতুনই। তবে ১৯৯৬ সালে আরেক স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কেনিয়ার জয় এই বৈশ্বিক আসরটির ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অঘটন হয়ে আছে। পুনেতে আবার বিশ্বকাপ ফেরার সময় অবশ্য মুখোমুখি হতে যাওয়া দুই দলের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।

টানা তিন ম্যাচ জিতে দুরন্ত বেগে ছুটতে থাকা ভারতের সামনে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাটুকু পর্যন্ত নেই। সেটি নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নামার আগে আফগানিস্তানকে নিয়েও ছিল না। মাঠের পারফরম্যান্সে আফগানদের মতো বিশ্বকাপে আলোড়ন তুলে দেওয়ার সুযোগ তাই আছে বাংলাদেশেরও। যদিও ভারতের ১১ জনের বিপক্ষেই শুধু নয়, সাকিব আল হাসানদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকার কথা এমসিএ স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারিরও। সব টিকিট বিক্রির ঘোষণার পর অনেক ম্যাচেই গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও এখানে যে সেই সম্ভাবনা নেই, ভারতের আগের ম্যাচগুলোই এর প্রমাণ।

এই পুনেতেই থাকেন ভারতের অভিজ্ঞ সাংবাদিক সুনন্দন লেলে। তিনিও নিশ্চিত যে ‘ভারতীয়রা অবশ্যই ভারতের খেলা দেখতে আসবে। ম্যাচ শুরুর আগেই দেখবেন যে গ্যালারি ভরে গেছে।’ তবে যে দেশের প্রধান খেলা ক্রিকেট, সেখানে বিশ্বকাপের বেশির ভাগ ম্যাচেই গ্যালারি ফাঁকা থাকছে। লেলে মনে করছেন, একই সময়ে একাধিক ধর্মীয় উৎসবের কারণেও রং হারিয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ‘ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা যে অন্য দলের ম্যাচ দেখে না, বিষয়টি ঠিক এ রকম নয়। কিন্তু সমস্যা হলো ক্রিকেট উৎসবের মধ্যে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবও পড়ে গেছে। নবরাত্রি এবং দেওয়ালি সামনে রেখে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয়ের একটি বড় অংশই খরচ হয়ে গেছে। একই সময়ে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে ভ্রমণ ও অন্যান্য খরচের ধাক্কা নেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।’

অথচ অনেক ম্যাচের না টিকিট বিক্রি শেষ! আসরের এই পর্যায়ে এসে তাই টিকিট নিয়ে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাও গোপন নেই। নানামুখী সমালোচনার মধ্যে আছে শহর থেকে বেশ দূরের কয়েকটি ভেন্যু বেছে নেওয়ার বিষয়টি। হায়দরাবাদে শহর থেকে স্টেডিয়াম বেশ দূরে। ধর্মশালাও খুব সহজে ক্রিকেট দেখতে ছুটে যাওয়ার মতো ভেন্যু নয়। পুনেতে স্টেডিয়ামের আসার ধকলের কথা তো শুরুতেই জানলেন।

তবে ভারত খেলছে বলে গাহুঞ্জে নামের দূর গ্রামেও আগামীকাল উৎসব লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু বৃহত্তর ছবিটা দেখতে গেলে এই উৎসবের মধ্যেও বিশ্বকাপটি মলিনই দেখায়!

LEAVE A REPLY