নেপথ্যে থাকা আসাদ ও জসিমের বিরুদ্ধে রয়েছে দুই ডজন মামলা

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া এসএম আসাদুজ্জামান ও মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অন্তত দুই ডজন মামলার হদিস পাওয়া গেছে। এসব মামলার অধিকাংশই আসাদুজ্জামানের নামে। গত দুই দশকে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে মারামারি এবং চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়। এছাড়া র‌্যাব পরিচয়ে স্বর্ণ দোকানে লুট, নারী ও শিশু নির্যাতন, চেক প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগেও রয়েছে মামলা। জোর করে মানুষের জায়গাজমি দখল করায় আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ ভূমিদস্যু হিসাবে এলাকায় পরিচিত। মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে থানায় অন্তত ১০টি সাধারণ ডায়েরিও রয়েছে। সর্বশেষ থানা হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর আসাদ ও জসিমের নাম উঠে আসে। রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীকে দিয়ে তারা সাবেক ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করান। ওই মামলায় গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলার এজাহারে আসাদ ও জসিমকেও নেপথ্যের ইন্ধনদাতা হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে রনি আক্তার তানিয়া নামের ওই নারী আসাদ এবং জসিমের ইন্ধনে দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বলে স্বীকার করেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি ৩০ শতক জায়গায় বালু ভরাট করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক শহীদুল্লাহ। স্ত্রীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জায়গায় ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে তার সঙ্গে এসএম আসাদুজ্জামানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন আসাদ। দিতে থাকেন হুমকি-ধমকি। সেই থেকে প্রায় ৫ বছর আসাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে থানা-পুলিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত ধরনা দিয়েছিন দুদকের সাবেক কর্মকর্তা। তবে আসাদ ও জসিমের চক্রান্তের কাছে হেরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে।

দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার শ্যালক কায়সারকে ঘায়েল করতে রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারীকে দিয়ে আদালতে মিথ্যে মামলা দায়ের করান আসাদ ও জসিম। যথারীতি দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়। সেই ওয়ারেন্ট মূলে চান্দগাঁও থানা পুলিশ শহীদুল্লাহকে ধরে নিয়ে যায়। আটকের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত দুদক কর্মকর্তা পুলিশ হেফাজতেই মারা যান। অথচ যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গত সোমবার সেই মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেছে বাদি। সে নিজেই বলেছেন, মামলাটি ছিল মিথ্যা।

জানা গেছে, এসএম আসাদুজ্জামান নগরীর চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহরের এক কিলোমিটার এলাকার মোজাহের উল্লাহ মুহুরী বাড়ির এসএম এহসানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাসহ আদালতে অন্তত দুই ডজন মামলা রয়েছে। মানুষের জায়গাজমি দখল করে চাঁদা দাবির অভিযোগে ২০০৪ সাল থেকে নগরীর বিভিন্ন থানায় এসব মামলা হয়। এছাড়া র‌্যাব পরিচয় দিয়ে স্বর্ণালংকার ডাকাতির দায়ে চকরিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে। অপরদিকে মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা। জসিম উদ্দিন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গৈয়া মোহাম্মদের বাড়ির শামসুল আলমের ছেলে।

সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে দুদকের সাবেক কর্মকর্তার স্ত্রীর করা মামলার আবেদনে আসাদ ও জসিমকে অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন শহীদুল্লাহর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার। আদালত মামলাটি থানায় এজাহার হিসাবে গণ্য করার জন্য চান্দগাঁও থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন। এরপর থেকে চান্দগাঁও থাানর ওসি খাইরুল ইসলাম ছুটিতে চলে যান। একই দিন থানার পরিদর্শক মুনিবুর রহমানকে সিএমপির পশ্চিম বিভাগে বদলি করা হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে এসএম আসাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি ছোটকাল থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করছি। শহরে থাকার একটি জায়গা নিতে চেয়েছিলাম। সেই সুবাদে একটি জায়গার মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতে পাওয়ার নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি শহীদুল্লাহ সাহেবকে চিনতাম না। ওনার বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করার সঙ্গে আমি জড়িত না।’

গত ৩ অক্টোবর রাতে নগরীর এক কিলোমিটার এলাকায় বাসার কাছে রাস্তা থেকে দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, থানায় নিয়ে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে ইনহেলার দিতে দেয়নি পুলিশ। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তিনি।

LEAVE A REPLY