চার কারণে আমদানির ডিম আসায় বিলম্ব

ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি তৃতীয় দফায় মোট ১৫ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু অনুমতির পর এক মাস হয়ে গেলেও দেশে ডিম আসেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চার কারণে আমদানি করা ডিম আসায় সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে- আমদানির ঘোষণা দিলেও ১৮-২০ দিন পর আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) দেওয়া, ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ, আমদানিতে শর্ত পূরণের জটিলতা ও আসন্ন দুর্গাপূজার কারণে ডিম আনতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে সামনের সপ্তাহে ডিম আনা যাবে কিনা এটা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

গত রোববার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই আমদানি করা ডিম দেশে আসবে। বর্তমান ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিমের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলেছে। আশা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহে ডিম আমদানির প্রথম চালান দেশে আসবে। তবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও ডিম দেশে আসেনি।

এদিকে কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ডিমের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে। সম্প্রতি সেই চক্র অতি মুনাফা করতে প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৫-১৬ টাকায় নিয়ে ঠেকায়। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো চারটি প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। দ্বিতীয় দফায় ২১ সেপ্টেম্বর ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। তৃতীয় দফায় রোববার নতুন করে আরও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। ফলে তিন দফায় ১৫ প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেই ডিম এখনো দেশের বাজারে আসেনি। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের আদেশের কোনো তোয়াক্তা করছে না। বিক্রি করছে বাড়তি দরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম দফায় আমদানির অনুমতি পাওয়া এক প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, ডিম আমদানির কার্যক্রম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার অভাব পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা পণ্য আমদানির জন্য আইপি প্রদান করে। এইচএস কোড (বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য শনাক্তের নম্বর) ঠিক করে আইপি দিতে এক দিনের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার পর প্রায় ২০ দিন পর ডিম আমদানির আইপি নিতে হয়েছে। পাশাপাশি ডিম আমদানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ১০০ টাকার ডিম আমদানিতে সরকারকে ৩৩ টাকা রাজস্ব দিতে হবে। তাই সব মিলে লাভ করা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ডিম আমদানিতে শর্তপূরণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ডফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করার কথা বলা হয়েছিল। ডিমে ভাইরাস নেই সেই সনদ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর দুর্গাপূজার ছুটিতে স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ভারতের ব্যবসায়ীরাও উৎসবে ব্যস্ত থাকবেন। সব মিলিয়ে সামনের সপ্তাহেও আমদানির ডিম দেশে আসা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি পিস ডিম ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাজার তদারকির মাধ্যমে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে। পাশাপাশি খামারিরা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি শুরু করেছেন। আশা করি ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

LEAVE A REPLY