সিনেমা কেন বানাব, ইউটিউব থেকেই আয় করি ৩ লাখ

আশির দশক থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত আছেন বরেণ্য নির্মাতা মালেক আফসারী। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলোর বেশির ভাগই ব্যবসা সফল। তবে নির্মাণ ছেড়ে মালেক আফসারী এখন ব্যস্ত ফেসবুক ও ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট নির্মাণে।

গতকাল রবিবার ছিল তাঁর জন্মদিন। আজ সোমবার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে।

জন্মদিন কিভাবে কাটালেন?
মালেক আফসারী: বেশ ভালো। তেমন আয়োজন ছিল না।

পারিবারিকভাবে পালন করেছি। হৈচৈ করেছি। খাওয়াদাওয়া করেছি। ভালো কেটেছে বলতে পারেন।

২০১৯ সালে পাসওয়ার্ডের পর আর চলচ্চিত্র নির্মাণে দেখা যায়নি…
মালেক আফসারী: আমি তো আর চলচ্চিত্র নির্মাণ করব না। সে ইচ্ছাও নেই। নির্মাণের ইচ্ছা মরে গেছে। বলতে পারেন একেবারে অবসর নিয়েছি।  

এর কারণ কী?
মালেক আফসারী: আপনি মুম্বাইয়ের দিকে তাকান, সুভাষ ঘাই থেকে প্রকাশ মেহরা, যাঁরা একসময় অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, এমনকি সানি দেওলকে নিয়ে ছবি বানাতেন, তাঁরা এখন আর কেউ ছবি বানান না।

সব কিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। সিনেমা ছেড়ে দিয়ে যে স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যস্ত আছি, ইউটিউবিং করি, এটা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। কারণ এটার সঙ্গে ডলার জড়িত। এখানে আমি সময় দিলে সরাসরি পয়সা পাচ্ছি। এটা আমার কাজে লাগছে। আমার আর এফডিসিতে গিয়ে বসে থাকার ইচ্ছা নেই। কিছু নির্মাণের জন্য আবেদন করব, সে মনমানসিকতাও নেই।

এর পেছনে কি অন্য কোনো কারণ আছে?
মালেক আফসারী: আমি মনে করি, কোনো পরিচালক যখন শিল্পীর পেছনে ঘোরে তখন সে সুযোগ নেবেই। উল্টো শিল্পী যদি পরিচালকের পেছনে ঘোরে সেটা হবে সঠিক কাজ। আর পরিচালক যদি শিল্পীর পেছনে ঘোরে তাহলে কাজ করবে কখন? একটা চরিত্র তো আর সিনেমায় থাকে না। সবার পেছনে ঘুরতে গেলে সিনেমা করার সুযোগই তো পাবে না। পরিচালকের উচিত সিনেমা নিয়ে ভাবা। কিন্তু আমাদের প্রডিউসারকে নিয়ে বনানীতে গিয়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিতে হয়। আমি এসবের মধ্যে নেই। 

এখন তো সিনেমার একটা সুদিন আসছে বলে শোনা যায়…
মালেক আফসারী: শোনা যায়। কিন্তু সুদিন কয়টা সিনেমার জন্য আসছে? অল্প কয়েকটা। ৩৬৫ দিনে ৫২ সপ্তাহ। তো এই ৫২টা ছবি তো লাগবে। সেন্সরে এর চেয়ে বেশি ছবি পড়ে আছে। হল মালিকদের কারো কোনো আগ্রহ নেই। তারা মার খেয়ে খেয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ফেলেছে। সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বড় ক্ষতি হয়েছে অনুদানের কারণে। যখন আপনি অনুদান নিচ্ছেন তখন কিন্তু আপনি বস ডেকে অনুদান নিচ্ছেন। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রের গল্পে এমন কিছু লিখছেন, যে কারণে আপনি অনুদান পাচ্ছেন। এর মানে পুরো বিষয়টাই একটা ফরমায়েশির ব্যাপার। সিনেমা তো ফরমায়েশে হয় না। ধরেন, হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে আমি গিয়ে যদি বলতাম, স্যার পুলিশের এমন একটা চরিত্র বানান, যে কখনো ঘুষ খাবে না, সব সময় ভালো কাজ করবে। আপনার কি মনে হয় এটা হুমায়ূন সাহেব মানতেন?

তাহলে বলতে চাচ্ছেন এখন সিনেমার ধরন বদলে গেছে?
মালেক আফসারী: অবশ্যই বদলে গেছে। আগে পরিচালকের হাত ধরে প্রযোজক আসত। এখন পরিচালকের হাত ধরে আসে না। আসে নায়িকার হাত ধরে অথবা নায়কের হাত ধরে। ধরেন অনেক প্রযোজক আছেন যাদের নায়িকারা বান্ধবী। সেই লোকের আবার অনেক টাকা। এমনও হয়, মাসে কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে ইন্টারেস্টই পায়। তো নায়িকা বান্ধবী যদি তাকে ধরে, সে তো সিনেমা বানাবেই। সে তো গল্প বোঝে না, চরিত্র বোঝে না, পরিচালক বোঝে না। সে শুধু তার বান্ধবীকে বোঝে। অথবা তার একটা বন্ধু হিরো হতে চেয়েছে আর ইনভেস্ট করেছে। এভাবে সিনেমা হয় না। সিনেমা একটা রাজকীয় ব্যাপার। 

এই রাজকীয় ব্যাপারে আপনি আর ফিরবেন না?
মালেক আফসারী: নাহ। গত বছর আমাকে প্রযোজক তাপসী ঠাকুর বলেছিলেন শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা বানাতে। আমি না করে দিয়েছি। কারণ শাকিব খান যদি আমাকে না করে দেয় তাহলে তো আমি এটা মেনে নিতে পারব না। 

আপনি তাহলে শাকিব খানের কাছে যাননি?
মালেক আফসারী: নাহ। পাসওয়ার্ড সিনেমার পর আর দেখা হয়নি আমাদের। কথাও খুব বেশি হয়নি। মাঝেমধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে একে অপরের খোঁজ নিই। এটুকুই। 

সিনেমা ছেড়ে এখন আপনার ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে কেমন আয় হয়?
মালেক আফসারী: আমি একটা সিনেমা করে যে সম্মানী পাই; মানে সর্বশেষ পাসওয়ার্ড সিনেমায় যেটা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি টাকা দুই মাসেই চলে আসে। সহজ করে বললে, মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আসে। আমি তো ভিডিও কম দিই, আরো বেশি দিলে হয়তো বেশি পেতাম। তবে এ রকম টাকা-পয়সা এলে দেড়-দুই বছর পর নিজের টাকায় সিনেমা বানাতে পারব।

আপনি ইউটিউবের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে?
মালেক আফসারী: এটা বলার আগে কয়েকটা পুরনো ঘটনা বলি। বেইলি রোডে আমার একটা ডায়মন্ডের দোকান ছিল। টানা সাত বছর ব্যবসা করেছি। কিন্তু শান্তি পাইনি। ওই ব্যবসা করার জন্য যা দরকার সেটা আমার নাই। পরে চাল-ডালের একটা ব্যবসা শুরু করলাম। আমার স্ত্রী দেখাশোনা করত। করোনাকালে সেটাও গেল। এরপর ভাবলাম, আমি তো মিডিয়ার মানুষ। তাই এটা করতে হবে। কিন্তু করোনায় তো আর সম্ভব না, তাই ইউটিউবিং শুরু করলাম। চট্টগ্রামের একজন আমাকে ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিল। সেই শুরু, এর দেড় মাসের মধ্যে মনিটাইজেশন পাই। এখন চ্যানেলের বয়স মাত্র তিন বছর। অসংখ্যা মানুষ নিয়মিত ভিডিও দেখেন। এখন অ্যাডমিনরা আছেন। তারা চ্যানেল দেখাশোনা করেন। আসলে কিছু না করলে সবাই ভুলে যাবে। তাই নিজেকে মানুষের সামনে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা থেকে কিছু একটা শুরু করি। এভাবেই এখন জীবন চলে যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY