সমাবেশের রাজধানী কাল

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক কর্মসূচি ঘিরে কাল মহাসমাবেশের নগরীতে পরিণত হবে রাজধানী ঢাকা।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট, নয়াপল্টন ও মতিঝিলের শাপলা চত্বর-এ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে দল তিনটি। যদিও তাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এ নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা।

তবে দলগুলো ঘোষিত ভেন্যুতেই মহাসমাবেশ করতে অনড়। এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ মোট ৩৭টি রাজনৈতিক দলও প্রায় একই সময়ে পৃথক মহাসমাবেশ করবে।

এ নিয়ে জনমনে বাড়ছে উত্তেজনা ও নানা উৎকণ্ঠা। সবার প্রশ্ন-কী হতে যাচ্ছে কাল। এদিকে সমাবেশ ঘিরে যে কোনো অনাহূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে প্রস্তুত থাকবে বিজিবি। পরিস্থিতি তৈরি হলেই তারা অ্যাকশনে যাবে। ডিএমপির পক্ষ থেকেই প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে রাজধানীজুড়ে। এছাড়া পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর থাকবে।

ছাড় না দেওয়ার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ শুরু

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় আওয়ামী লীগ। দুই লাখ লোক সমাগমের মাধ্যমে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটি নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘিরে বিএনপিকে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি কোনো ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনাও আছে দলটির।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পালটা আঘাতের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এ বিষয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ, অলিগলি ও মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থান শুরু করেছে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ করেছে তারা। এদিন সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের স্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। তিনি আরও বলেন, কথা একটাই বলছি-‘দ্য আনসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স, নট সাইলেন্স। আর কিছু নয়। আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। আমি যা বলেছি, ভালোটা বলেছি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। কিন্তু কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের মতো অপশক্তিকে রাজপথ দখলের সুযোগ দেব না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা হলে তা অবশ্যই প্রতিহত করা হবে।

একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আমরা কোনো বাধা দেব না। কিন্তু কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ওইদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবেই ঢাকা দখল করতে না পারে। সেজন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আলাদা দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মূলত বিএনপি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে অকারণে বিএনপির সঙ্গে বিশৃঙ্খলায় না জড়ানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। কর্মসূচি ঘিরে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে-তাহলে পালটা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। যদি অবস্থান কর্মসূচির মতো বসে পড়ে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শক্তি প্রয়োগ করবে দলের নেতাকর্মীরাও।

এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ২০ অক্টোবর পুলিশের কাছে চিঠি দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। ওই চিঠির জবাবে বুধবার রাতে বিকল্প দুটি স্থানের নামসহ সাত তথ্য চায় পুলিশ। সেই চিঠিতে সমাবেশে আগত লোকের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কিনাসহ সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে সেই চিঠির জবাবও দেয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের পক্ষে রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের দেওয়া চিঠিতে সমাবেশের বিস্তৃতির বিষয়ে বলা হয়, সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নগরভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় এবং মতিঝিল সড়ক ও স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য এসব স্থানে মাইক লাগানো হবে।

চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করবেন। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবর (শনিবার) শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চনির্মাণ ও প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার। আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশস্থল ও তার কাছাকাছি এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে ২৮ তারিখকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে মিছিল-সমাবেশ করেছে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশে বক্তারা আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের যে কোনো অশুভ অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং সব নেতাকর্মীকে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।

কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ যুগান্তরকে জানান, এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মিছিল হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে ঢাকা-৪ আসনের শ্যামপুরে, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে ঢাকা-৫ আসনে, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ঢাকা-৮ আসনে এবং ইমরান হোসেন জনের নেতৃত্বে বংশাল থানার অন্তর্গত ৩২নং ওয়ার্ডে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি যুগান্তরকে জানান, পূর্বনির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ উত্তরা, মিরপুর, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩ শাহআলী থানা, দারুসসালাম থানা ও শেওড়াপাড়াসহ আরও বেশ কিছু স্থানে মিছিল সমাবেশ করেছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল : সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে মিরপুর বিআরটিএ অফিসের সামনে থেকে মিছিল বের করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মিছিলটি শেওড়াপাড়া হয়ে মিরপুর গোলচত্বরে এসে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ প্রমুখ।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এসএম জাহিদের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক, যুব মহিলা লীগের ইসরাত জাহান নাসরিন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদুজ্জামান রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভীতি কাটিয়ে নেতাকর্মীর ঢলের আশায় বিএনপি

ভেন্যু নিয়ে নানা নাটকীয়তা, নয়াপল্টনেই অনড়

সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কাল। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়ে সারা দেশ থেকে বেশিরভাগ নেতাকর্মী আগেভাগেই রাজধানীতে পৌঁছেছেন। কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিও পৃথক প্রস্তুতি নিয়েছে। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে এদিন নেতাকর্মীদের ঢল নামবে বলে প্রত্যাশা নেতাদের। শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ ঘিরে নিজে থেকে সংঘাতে না জড়ানোর জন্য কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকারের দিক থেকে ‘আক্রমণ’ হলে তাতে উলটো সুবিধা হবে। সম্ভাব্য পালটা আক্রমণ থেকে পুলিশ-প্রশাসনসহ সরকারের ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করা যাবে। এছাড়া কর্মসূচি ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে ত্বরিত কার্যকর পদক্ষেপেরও আশা করেন নেতারা।

এদিকে মহাসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচির জন্য আগেই পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। তাদের চিঠির জবাবে বুধবার বিকল্প দুটি স্থানের নামসহ সাত তথ্য চায় পুলিশ। সেই চিঠিতে সমাবেশে লোক সমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কিনাসহ সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিএনপির পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পালটা চিঠি দিয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনো ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।’ মহাসমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে বলেও উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ওইদিন বেলা ২টায় শুরু হবে এবং মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে। সমাবেশের বিস্তৃতির প্রসঙ্গে বিএনপি পুলিশকে আরও জানিয়েছে, সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। বিজয়নগর মোড় ও ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছুদূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে। এতে বিএনপির নেতারা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না। সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানায় বিএনপি। স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা হবে ৫০০।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে-এ কথা লিখিতভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে। মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এদিন রাজধানী হবে মিছিলের নগরী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশে যোগদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের লড়াইয়ে অংশ নিতে দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রেফতার-ভয়ভীতি দেখিয়ে জনস্রোত ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। লাখ লাখ লোক মহাসমাবেশে অংশ নেবেন।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সরকার নানামুখী চাপে গ্রেফতার, ধরপাকড় বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের ভয়, আরেক দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ। এই ভয়-চাপের রেশ নেতাকর্মীদের মধ্যে যাতে না পড়ে, সেজন্য গ্রেফতার, শক্তি প্রয়োগের হুমকি, পুলিশকে দিয়ে নানা কথা বলানো হচ্ছে। এসব উপেক্ষা করেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দিক থেকে ‘আক্রমণ’ হলে তা প্রতিরোধের নির্দেশনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে সারা দেশের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই এখন ঢাকায়। বাধা-বিপত্তি ও হয়রানি এড়াতে আগেভাগেই তারা রাজধানীতে পৌঁছেছেন। এক্ষেত্রে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। একসঙ্গে অনেকজন জড়ো না হয়ে ব্যক্তিগতভাবে যে যার মতো বাস-ট্রেনে কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে রাজধানীতে আসেন। আজও অনেকে আসবেন। কয়েকদিন অবস্থান করার মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাজধানীতে এসেছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

মহাসমাবেশে যোগ দিতে এরই মধ্যে ঢাকা পৌঁছেছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ। তিনি যুগান্তরকে জানান, নগরীর ১৫ থানা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। অনেকেই পৌঁছে গেছেন। বাকিরা শুক্রবার (আজ) পৌঁছে যাবেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, ৭টি উপজেলা থেকে অন্তত ১২ হাজার নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এর মধ্যে অনেকেই চলে গেছেন। দুর্গম উপজেলা সন্দ্বীপের নেতাকর্মীরাও ঢাকার উদ্দেশে ছুটছেন। সাগর পাড়ি দিয়ে নেতাকর্মীরা চট্টগ্রামে এসে সেখান থেকে বাসযোগে ঢাকা যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম বলেন, সবাইকে আগেভাগে যার যার মতো চলে যেতে বলেছি। অনেকেই পৌঁছে গেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীসহ উত্তরের বিএনপি নেতাকর্মীরা চার ভাগে ভাগ হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। দলীয় পদ-পদবি আছে এমন নেতাকর্মীদের দুই ভাগ ইতোমধ্যে ঢাকায় ঢুকেছেন। শুক্রবারের (আজ) মধ্যে একদল ঢাকায় প্রবেশ করবেন। শেষভাগ সড়ক ও রেলপথে ঢাকায় ঢুকবেন শনিবার দুপুরের মধ্যে। তিনি আরও জানান, উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় যেতে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হয়নি।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিরল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনম বজলুর রশিদ জানান, ইতোমধ্যে অনেকেই ঢাকায় চলে গেছেন, কেউ যাচ্ছেন এবং কেউ যাবেন। যারা ঢাকায় যাচ্ছেন বা যাবেন তাদের হোটেল-মোটেলের পরিবর্তে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY