গাজায় শরণার্থীশিবিরে বোমা হামলায় নিহত অন্তত ৫০

ইসরায়েলি সেনারা গাজায় আরো ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে গতকাল মঙ্গলবারও হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই হয়েছে বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিজেরাই জানিয়েছে। তারা বলেছে, ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও মেশিনগান নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় মৃত্যুলীলাও অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তারা ইসরায়েলের সাঁজোয়া যানে হামলা চালিয়েছে।

গত সোমবার রাতেও গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের ৩০০টি অবকাঠামোয় হামলার দাবি করেছে তারা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, পশ্চিম জাবালিয়ায় হামাসের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তাঁরা। হামাসের কমান্ডার ইব্রাহিম বিয়ারিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া হামাসের প্রায় ৫০ জন যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হামাস।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযান চালানোর সময় তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে।

এদিকে গাজা সিটির অদূরে আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় সূত্রের বরাতে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শিবিরের একটি ঘরে চালানো হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ১৫ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত সোমবার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন—এটা যুদ্ধের সময়।

তিনি বলেন, ‘বাইবেল বলে যে শান্তি ও যুদ্ধের একটি সময় আছে। এটা যুদ্ধের সময়। আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যতের যুদ্ধ। যুদ্ধবিরতির আহ্বানের অর্থ হবে হামাসের কাছে, সন্ত্রাসবাদের কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান।’ গতকাল সন্ধ্যায় জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং কাছের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। তাত্ক্ষণিকভাবে এই বিস্ফোরণের বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এদিকে ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে।

সিনাইয়ে স্থানান্তরের আহ্বান প্রত্যাখ্যান

এদিকে গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সিনাই উপদ্বীপে জায়গা দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী। ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কিছু ইসরায়েলি কর্মকর্তা বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উত্তর-পূর্ব মিসরে স্থানান্তর করতে চান। কিন্তু গতকাল উত্তর সিনাই সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি বলেছেন, মিসরের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে কোনো আঞ্চলিক সংঘাতের সমাধান করা উচিত নয়।

পানিশূন্যতায় ঝুঁকিতে শিশুরা

গাজার শিশুরা পানিশূন্যতায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি বলেছে, পানিশূন্যতার কারণে শিশুমৃত্যুর হুমকি ক্রমবর্ধমান। জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেছেন, গাজায় স্বাভাবিক দৈনিক চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ পানি পাওয়া যাচ্ছে। লবণাক্ত, অপরিশোধিত পানি পান করে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদিকে ডাব্লিউএইচও বলেছে, গাজায় জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।

খাদ্যসংকটের চিত্র

জনাকীর্ণ দক্ষিণ গাজায় পানি ও খাবারের সমস্যা প্রকট। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বাইরে বিশুদ্ধ পানির জন্য জাতিসংঘের ট্যাংকার রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ পানির বোতল ভর্তি করার জন্য লাইনে দাঁড়ায়। বিবিসির সাংবাদিক সোমবার সেখানে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। ওই ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, পরিবারের জন্য পাঁচটি রুটি পেতে তিনি ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইসরায়েল বলেছে, তারা এই অঞ্চলে আবার পানি পাম্প করা শুরু করবে। তবে লোকজনের বাড়িতে সেই পানি পাঠানোর জন্য কোনো জ্বালানি নেই। 

সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি
 

LEAVE A REPLY