দ্বিতীয় দিনেও সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগ

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ, যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। চলার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে অনেক স্থানে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এদিন রাজধানী ঢাকায় তিনটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে পেট্রোলবোমা ও পাথর মেরে দুটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েকটি মালবাহী ট্রাকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ফটকে তালা দেয় ছাত্রদল। পরে সহকারী প্রক্টরের নির্দেশে তালা খুলে দেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। ফরিদপুরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সিলেটে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে ছাত্রদলের ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়েছে। বগুড়ায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় তিনমাথা রেলগেট এলাকা। এসব ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের আরও প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

সারা দেশেই যান চলাচল কিছুটা বাড়লেও তা ছিল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলও ছিল সীমিত। এদিনও সড়কে মোড়ে মোড়ে সতর্কাবস্থানে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

বুধবার রাজধানীর শ্যামলীসহ বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, পিকেটিং এবং সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। যান চলাচল সীমিত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘক্ষণ পরপর বাস মিললেও তাতে ছিল অনেক ভিড়। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, হরতাল ও অবরোধ ঘিরে ২১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ২০১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে ৩১ অক্টোবরেই গ্রেফতার হন ১৪১ জন।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত সোয়া ৭টা পর্যন্ত সারা দেশে ৮টি অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছেন তারা। এরমধ্যে রাজধানীতে ২টি, গাজীপুর ও সাভারে ২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী) ২টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) ১টি, রংপুর বিভাগে (পার্বতীপুর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪টি বাস, ১টি লরি, ১টি ট্রাক, ১টি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়।

রাজধানীতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ : টানা ৩ দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে বুধবার রাজধানীর মুগদা, বাড্ডা ও শ্যামলীতে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। মুগদা থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। সকালে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে রামপুরায় পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ সময় রিজভী বলেন, এবার জনগণের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে। খিলক্ষেত, মিরপুরের রূপনগর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর। অবরোধ সমর্থনে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ছাত্রদল, মিরপুর সড়কে বাংলা কলেজ ছাত্রদল, গুলশানে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল ও সদরঘাট এলাকায় পিকেটিং করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল। দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা। এখানে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। বনশ্রী-মেরাদিয়া বাজারে অবরোধ সমর্থনে মিছিল করে ছাত্রদল। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী যুবদল মহানগর দক্ষিণ। মিছিল শেষে পুলিশের একটি বাস ও কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা। রামপুরায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। এছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা দল ও জোটের বিক্ষোভ : দুপুরে তোপখানা রোড থেকে মিছিলটি শুরু করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিলটি বিজয়নগর, পল্টন মোড় এবং প্রেস ক্লাব ঘুরে সচিবালয়ের পাশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।

দুপুর ১২টার দিকে পল্টনের আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিজয়নগর মোড় ঘুরে পল্টন গিয়ে শেষ করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাকর্মীরা।

সকালে বিজয়নগর পানির ট্যাংকিসংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। অবরোধে সংহতি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।

জামায়াতের অবরোধ ও বিক্ষোভ : এদিন হরতাল সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও পিকেটিং করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সকালে গেন্ডারিয়া ও মালিবাগে রেলপথ এবং ডেমরা, পোস্তগোলায়, দক্ষিণখান, উত্তরা, মিরপুর, তেজগাঁও মহাসড়ক অবরোধ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ছিল স্থবিরতা। সারি সারি বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ছিল। টার্মিনালের সামনের সড়কেও ছিল বাসের দীর্ঘ সারি। টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সতর্কাবস্থান দেখা গেছে। দিনভর শুধু এনা পরিবহণের কিছু বাস চলেছে। তবে যাত্রীর অভাবে বিলম্বে ছেড়েছে অধিকাংশ বাস। অন্যান্য বাসের স্টাফরা জানিয়েছেন, যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়া হচ্ছে না। বেলা ১১টার দিকে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সৌখিন পরিবহণের একটি বাস যাত্রী তুলছে। বাসে দুই থেকে তিনজন যাত্রী দেখা গেছে। বাসটির চালক যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলে সৌখিন বাস। এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর অভাবে ছাড়তে পারছে না।

লঞ্চ চলাচল সীমিত : অবরোধে নৌপথে সীমিত পরিসরে লঞ্চ চলাচল করছে। বুধবার রাজধানীর সদরঘাট থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ লঞ্চ চলাচল করেছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩১টি লঞ্চ সদরঘাটে এসেছে এবং যাত্রীস্বল্পতায় মাত্র ১০টি লঞ্চ গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। ঘাটে অধিকাংশ লঞ্চ অলস সময় পার করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যাত্রীস্বল্পতার কারণে অধিকাংশ লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। যাত্রী হলেই লঞ্চ ছেড়ে যাবে।

ডেমরা : রাজধানীর ডেমরায় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের ২২ নেতাকর্মী। তাদের বুধবার বিকালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার রাতে ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় করা বিভিন্ন মামলায় আসামি করে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডেমরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুব্রত কুমার পোদ্দার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাবতলী থেকে ছাড়েনি দূরপাল্লার বাস : বুধবার রাজধানীর গাবতলী এলাকার পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। সকাল থেকে রাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো পিকেটিংও চোখে পড়েনি। পাহারায় ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। যাত্রীর অপেক্ষায় ছিল গাবতলী টার্মিনালের শত শত বাস। তবে ছাড়েনি দূরপাল্লার কোনো বাস।

ঢাকা-ঝিনাইদহ-মেহেরপুরগামী এসডি পরিবহণের কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি সকাল থেকে। অথচ চারটি ট্রিপ ছেড়ে যাওয়ার কথা। এসডি পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার করিম আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, অবরোধের কারণে তেমন যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়তে পারিনি। কাউন্টারের পাশেই ডিপোতে শত শত বাস অলস পড়ে আছে। সব বাসে কর্মরত মোটর শ্রমিকদের মধ্যে শঙ্কার ছাপ।

মোটর শ্রমিক আলমাস যুগান্তরকে বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে বেকার বসে আছি। এক টাকা কামাই নেই। অথচ দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ। আমাদের বাসের চাকা ঘুরলে বেতন না ঘুরলে নাই।

ঢাকা থেকে মেহেরপুরগামী সুপার সনি পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার বলেন, মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না। ঢাকার অভ্যন্তরেও যানবাহন কম। যে কারণে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। যাত্রী না পাওয়ার কারণে গাড়ি ছাড়তে পারছি না। এছাড়া ভয়ও কাজ করছে। নানা জায়গায় বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। একটা বাস পুড়ে গেলে ক্ষতি কে পূরণ করবে?

বিমানবন্দর এলাকা : এই এলাকায় বিএনপি-জামায়াতকে কোনো পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। তবে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই শতাধিক নেতাকর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে চলমান অবরোধ প্রতিহত করতে একটি মিছিল বের করেন।

ট্রেনে যাত্রী কম : অবরোধে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী তেমন ছিল না। ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির যুগান্তরকে জানান, বুধবারও সকাল থেকে কমলাপুর থেকে যথাযথ সময়ে সবকটি ট্রেন ছেড়ে গেছে। অবরোধে ট্রেনের কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। তবে কিছু কিছু ট্রেনে যাত্রী সংখ্যা সামান্য কম ছিল। আমরা প্রতিটি স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

বিমানবন্দর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায় স্বাভাবিক দিন এর তুলনায় দূরপাল্লার যাত্রী অনেক কম। তবে রাজধানীতে গণপরিবহণ স্বল্পতার জন্য লোকাল ট্রেনের যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। বিমানবন্দর রেল স্টেশনের জিআরপি ফাঁড়ি ইনর্চাজ এসআই সুনীল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করায় আজকে অবরোধের ২য় দিনেও স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী কম।

শ্যামলীতে চলন্ত বাসে আগুন : অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শ্যামলী স্কয়ারের সামনে ওয়েলকাম পরিবহণ নামে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় পথচারীরা আশপাশ থেকে পানি এনে দ্রুত আগুন নেভায়।

ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক জানান, এ ঘটনায় আমরা আশপাশের সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

রাজশাহী : সকালে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা নগরীর তিনটি প্রবেশমুখে কাঠের গুঁড়ি ও ইট ফেলে সড়কে যান চলাচল বন্ধের চেষ্টা করে। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। তবে শহরে অটোরিকশা, হিউম্যান হলার টেম্পোসহ ছোট যানবাহন বিভিন্ন রুটে চলাচল করেছে। রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ট্রেন ঠিক সময়ে রাজশাহী রেল স্টেশন ত্যাগ করে।

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের রায়গঞ্জের তবারিপাড়ায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় গম বোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। স্থানীয়রা জানায়, অবরোধকারীরা ট্রাকটির গতিরোধ করে ড্রাইভার ও হেলপারকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : গ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ায় বুধবার ভোরে গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে আটকে যাওয়া দুটি পাথর বোঝাই ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে উপজেলার পোমরা শান্তিরহাটে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

ফরিদপুর : ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের বাহিরদিয়া ব্রিজের কাছে বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিএনপির মিছিলে হামলা চালায় একদল যুবক। এতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। বিএনপির পক্ষ থেকে হামলার সঙ্গে সরকারদলীয় কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম, পটিয়া ও কর্ণফুলী : পটিয়া ও কর্ণফুলীর সীমান্ত এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থেকে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাসটি থেকে চালক মোহাম্মদ মোজাম্মেলকে (৬০) মারধর করে নামিয়ে দেওয়ার পর বাসটিতে প্রথমে ভাঙচুর ও পরে আগুন দেয়। আহত চালক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বগুড়া : চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহাজের ভাঙারি মালামাল বোঝাই একটি ট্রাক আনলোড করার জন্য বগুড়ার মাটিডালির দিকে যাচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাকটি ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বাঘোপাড়ায় পৌঁছলে মুখোশ পরিহিত ৬/৭ জন যুবক ট্রাকটি অনুসরণ করছিল। তারা সামনে দাঁড়িয়ে চালককে ট্রাক থামাতে বাধ্য করে। এরপর তারা পেট্রোল ঢেলে ট্রাকে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এর আগে সকালে মহাসড়কের তিনমাথায় একটি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ৪/৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ অন্তত ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে।

জাবি : ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রধান ফটক (ডেইরি গেট), জয় বাংলা গেট (প্রান্তিক গেট), মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেট, বিশমাইল গেট, ইসলামনগর গেট ও আমবাগানের প্রবেশ পথে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের নির্দেশে তালা খুলে দেয় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত প্রহরীরা।

ঈশ্বরদী (পাবনা) : কোলকাতা থেকে ঢাকাগামী আন্তর্জাতিক রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে পেট্রোল বোমা হামলা ও পাথর নিক্ষেপ করে দুটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বেলা ১২টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীর লোকোসেড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ককটেল ও পেট্রোল বোমার বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঈশ্বরদীর লোকোসেড রেলগেটের গেটম্যান শরিফুল ইসলাম জানান, ১৫/১৬ জনের একদল যুবক লোকোমোটিভ সেডের সামনে ট্রেনে ককটেল ও পাথর ছুড়ে মারে। এসময় দ্রুত ট্রেনটি ঢাকার দিকে চলে যায়।

সাভার : সাভারের বলিয়াপুর মধুমতি মডেল টাউনের সামনে সকালে রিমি পরিবহণের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন-আব্দুল আলীম ও সোহেল। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা : সকালে মোস্তফাপুর ও জামতলা এলাকায় মহাসড়কে চলাচলরত মালবাহী বেশ কয়েকটি ট্রাকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে দুই ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ আতিক (৩৫) নামে এক পিকেটারকে আটক করেছে। তিনি আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হরিপুর এলাকার মৃত শহিদুল হকের ছেলে।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ছিল না যানবাহন ও যাত্রীর চাপ। মহাসড়কে সুনসান অবস্থা বিরাজ করে। বুধবার দিনভর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : ঢাকা-রাজশাহী রেল-লাইনের কালিয়াকৈর উপজেলার পাচলক্ষ্মী এলাকায় রেললাইনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে তেমন ক্ষতি না হলেও এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সিলেট : অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার সিলেটে ছিল যুবদলের ডাকা হরতালও। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এবং দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ও রশিদপুরের মধ্যবর্তী স্থানে ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ : মঙ্গলবার সকালে কুলিয়ারচর ও ভৈরবে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে হতাহতের প্রতিবাদে বুধবার জেলায় অর্ধ দিবস হরতাল পালিত হয়েছে। এদিন হরতাল সমর্থকরা শহরের তেরিপট্টি এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান ও শহরতলীর খিলপাড়ায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে।

বরিশাল : ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে ও আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেছে বরিশাল বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর এলাকায় এই বিক্ষোভ করা হয়। এ ছাড়া লাকুটিয়া এলাকায় বিক্ষোভ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।

ধামরাই (ঢাকা) : সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শ্রীরামপুর এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। এ সময় স্কুলবাস ও যাত্রীবাহী বাসসহ ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের ওপর আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। এরা হলেন- কুশুরা ইউনিয়নের গোলাইল গ্রামের মেহের আলীর ছেলে মোস্তফা, সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামের রাকিব হোসেন ও মোরশেদ।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : বুধবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভার বটতল এলাকায় রড বোঝাই ট্রলিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যাওয়া গাড়িটি সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলমের বলে জানা গেছে।

সিলেটে নিহত জিলুর দাফন : বুধবার বিকালে যুবদল নেতা দিলু আহমদ জিলুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইলাইগঞ্জ বাজারে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ মদনগৌরীতে দাফন করা হয়েছে। এর আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল মর্গ থেকে জিলুর লাশ গ্রহণ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বিভিন্ন স্থানে মামলা ও গ্রেফতার : নোয়াখালী ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান দাবি করেন, জেলায় ১৫ মামলায় ১১০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। ময়মনসিংহে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দসহ ১৪৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপির ৭৮ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির ৬৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জে বিএনপির ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জের বাহুবলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আড়াইশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুলনায় নগরীর ৮ থানায় ৯ মামলায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে কুড়িগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের ৯ নেতাকর্মী, রাজশাহীর বাঘায় পৌর জামায়াতের সভাপতিসহ ৪, ফরিদপুরের সালথায় বিএনপির ৭, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ৬, খাগড়াছড়িতে বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশালে সংরক্ষিত-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন ও বরিশাল-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানসহ ১৮ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালে গৌরনদীতে ২, পাবনার চাটমোহরে ২, কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ৫, ময়মনসিংহের ভালুকায় ৮, পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ৭, নোয়াখালীর সেনবাগে ৯, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY