ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়, রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ ৯ নভেম্বর

সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানির তারিখ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আগামী ৯ নভেম্বর শুনানির তারিখ রেখেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। 

ওইদিন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার ৫ নম্বর ক্রমিকে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে গত ১৩ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেত্বাধীন বেঞ্চ ১০ আগস্ট শুনানির জন্য রেখেছিলেন।

পরে তা আর হয়নি।

গত বছর রায়ের রিভিউ শুনানি করতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। পরে ২৮ আগস্ট সে আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালতে। চেম্বর আদালত ওই বছর ২০ অক্টোবর রিভিউ শুনানির তারিখ দেন।

এর পর থেকে রিভিউ মামলাটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।

এতে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনরুজ্জীবিত করেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সময় করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরে আসে সংবিধানে। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পায়। এরপর ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনা করতে আপিল বিভাগে আবেদন করে।

আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আলাদাভাবে রায় লিখলেও সবাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন।

আর বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা প্রধান বিচারপতির লেখা রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত পোষণ করেন।

কাউন্সিল নিয়ে প্রশ্ন

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করায় সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি ধারা পুনর্বহাল হয়। ওই অনুচ্ছেদের পুরোনো ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।

কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।

৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন।

আর ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মত ক্ষমতা ধারণ করবে। সর্বোচ্চ আদালতে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন প্রয়াত মাহবুবে আলম।

এ রায়ের দুই বছর পর ২০১৯ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বিরুদ্ধে (বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, কাজী রেজা-উল হক ও একে এম জহিরুল হক) অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। তখন ওই বছরের ২২ আগস্ট তাদের বিচারকাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র (বর্তমানে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি দেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মাননীয় তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয় এবং পরবর্তীতে তারা ছুটির প্রার্থনা করেন।’

এরপর তিন বিচারকের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। ছুটিতে যাওয়ার পর চার বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের অসদাচরণের তদন্ত এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। অথচ হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধাই তারা ভোগ করে চলেছেন।

LEAVE A REPLY