আজ সন্ধ্যায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক অনুষ্ঠানে প্রাপকদের মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ বিতরণ করবেন। সন্ধ্যা ৬টায় তিনি পুরস্কার বিতরণ করবেন এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য দেবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, দর্শক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেশে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করবে। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা ইতিহাস, ঐতিহ্য, আশা-আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি মানুষকে বিনোদন দেয়। একটি ভালো চলচ্চিত্র মানবিক গুণাবলির বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

চলচ্চিত্রের অসীম শক্তি উপলব্ধি করে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৫৭ সালের ২৭ মার্চ অস্থায়ী আইনসভায় ইপিএফডিসি বিল উত্থাপন করেন। একই বছরের ৩ এপ্রিল শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমের জন্য বিলটি পাস হয় বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।

বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) বাংলা চলচ্চিত্রের অগ্রগতির একটি বড় মাইলফলক হিসেবে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলচ্চিত্রশিল্পের প্রসারে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

 আমি আশা করি শিল্পী, সহশিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, দর্শক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ঘটবে।’

এই উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ৩ এপ্রিলকে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস’ এবং চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা এবং কবিরপুরে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিএফডিসির আধুনিকায়ন এবং প্রতিটি জেলায় আধুনিক সিনেপ্লেক্সসহ তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ইপিএফডিসি) বিল, যা বঙ্গবন্ধু ১৯৫৭ সালের ২৭ মার্চ অস্থায়ী আইনসভায় উত্থাপন করেছিলেন এবং একই বছরের ৩ এপ্রিল পাস হয়েছিল।’

১৯৫৯ সাল থেকে সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিয়মিতভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ের চলচ্চিত্র যেমন ‘কাখোঁ আসেনি’, ‘কাচের দেওয়াল’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’ বাংলার মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করেছিল। জহির রায়হান পরিচালিত কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা তুলে ধরে বিশ্বজনমতকে একত্রিত করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।

’’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ধরে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা গাজীপুরের কবিরপুরে ১০৫ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। ফিল্ম সিটির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য ৩৭৯ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।’

বিএফডিসির নিয়মিত আয় বৃদ্ধি এবং চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএফডিসির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যায়ন ও সম্প্রসারণ নামে আরেকটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা চট্টগ্রামে একটি অত্যাধুনিক বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন নির্মাণ করেছি। আমরা সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছি এবং চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছি।’

জাতীয় চলচ্চিত্র নীতি ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য মেধাবী ও দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য আমরা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা প্রতিনিয়ত অসচ্ছল চলচ্চিত্র শিল্পী ও সহশিল্পীদের অনুদান দিয়ে যাচ্ছি। সরকার চলচ্চিত্র সেন্সর আইন ও বিধিমালা হালনাগাদ করেছে। চলচ্চিত্র সেন্সর না করে সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা চালু করে হালনাগাদ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। অস্বাস্থ্যকর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনী এবং চলচ্চিত্র পাইরেসি নিয়ন্ত্রণে ‘টাস্কফোর্স’ তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে চলচ্চিত্র পাইরেসি অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে।’’

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে নির্মিত মুজিব বায়োপিক ‘মুজিব : দ্য মেকিং অব এ নেশন’ দেশ-বিদেশের ৬০০টিরও বেশি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছবিটি ভারতে বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষায় মুক্তি পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এর নির্মাতা বিখ্যাত ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি, এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।’

এই চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশের চলচ্চিত্র জাতীয় প্রযোজনায় সমৃদ্ধ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও গণতন্ত্রের যাত্রাকে তুলে ধরবে, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

আগামী প্রজন্মের জন্য দেশকে আধুনিক, মেধাভিত্তিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চলচ্চিত্র নির্মাতারা জীবনভিত্তিক ও বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র যে সুনাম অর্জন করেছে তা আমি আশা করি। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো উজ্জ্বল হবে।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ বিতরণ অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেছেন। এর আগে ৩১ অক্টোবর ২৭টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে যৌথভাবে পুরস্কার জিতেছে যথাক্রমে মুহাম্মদ কাইয়ুম ও মো. তামজিদ উল আলম প্রযোজিত ‘কুরা পোক্কির শুন্নে উরা’ এবং ‘পরান’ চলচ্চিত্র। প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল আলম খান খসরু (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং ‘রোজিনা’ নামে পরিচিত রওশন আরা রোজিনা চলচ্চিত্র শিল্পে তাদের বিশাল অবদানের জন্য ২০২২ সালের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার জিতেছেন। সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন তার ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ (বাংলায় ‘শিমু’ নামেও পরিচিত) চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন।

চঞ্চল চৌধুরী হাওয়া (বাতাস) চলচ্চিত্রে তার প্রধান ভূমিকার জন্য সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হন, যেখানে শীর্ষস্থানীয় চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ২০২২ যৌথভাবে জয়া আহসান চলচ্চিত্র ‘দ্য বিউটি সার্কাস’ এবং রিকিতা নন্দিনী শিমু চলচ্চিত্র ‘শিমু’-এর জন্য পান।

পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মো. নাসির উদ্দিন খান ‘পরান’ ছবির জন্য এবং আফসানা করিম মিমি ওরফে আফসানা মিমি ‘পাপ পুণ্য (ভাইস অ্যান্ড ভার্চু)’ ছবির জন্য সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। শুভাশিস ভৌমিক ‘দেশান্তর’ ছবির জন্য নেতিবাচক চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।

‘রোহিঙ্গা’ ও ‘বিরোত্তো’ ছবির জন্য যৌথভাবে সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন বৃষ্টি আক্তার ও মুনতাহা আমেলিয়া। ‘পেয়ার চাঁপ’ ছবির একটি গানের জন্য সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন রিপন খান (মাহমুদুল ইসলাম খান)। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির ‘এ মন ভিজে যায়’ গানের জন্য যৌথভাবে বাপ্পা মজুমদার এবং ‘হৃদিতা’ ছবির ঠিকানাবিহীন তোমাকে গানের জন্য চন্দন সিনহা সেরা গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন। আতিয়া আনিশা পেয়ার চাঁপ ছবির ‘এই শোহরের পথে’ গানটির জন্য সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছেন। প্রামাণ্যচিত্র বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র বিভাগে এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘোরে ফেরা’ শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কৃত হয়।

অন্যান্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- রবিউল ইসলাম জীবন (সেরা গীতিকার), শওকত আলী ইমন (সেরা সুরকার), ফরিদুর রেজা সাগর (গল্প), খোরশেদ আলম খসরু (গল্প), মুহাম্মদ কাইয়ুম (চিত্রনাট্যকার), এস এ হক অলিক (সংলাপ), সুজন। মাহমুদ (সম্পাদক), হিমাদ্রি বড়ুয়া (সেরা শিল্প নির্দেশনা), ফারজিনা আক্তার (সেরা শিশুশিল্পী বিভাগে বিশেষ পুরস্কার), রিপন নাথ (সাউন্ড ডিজাইনার), তানসিনা শাওন (কস্টিউম) এবং মো খোকন মোল্লা (মেকআপ)।

সূত্র : বাসস

LEAVE A REPLY