১২ বছর বয়সে প্রথম ছবির গানে প্লেব্যাক করে ৩০০ টাকা পেয়েছিলেন রুনা লায়লা

রুনা লায়লা। ছবি : সংগৃহীত

আজ ১৭ নভেম্বর। সংগীত জগতের ‘কুইন অব মেলোডি’ রুনা লায়লার জন্মদিন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে গান গেয়ে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। গান গেয়েছেন বাংলা, হিন্দি আর উর্দু ছবিতে।

১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন তিনি। সময়ের হিসাবে আজ তাঁর ৭১তম জন্মবার্ষিকী। তবে দিনটিতে দেশে নেই এই কণ্ঠসম্রাজ্ঞী। কলকাতায় আছেন তিনি।

সেখানে কোক স্টুডিও  কনসার্টে অংশ নেবেন। এরপর কিছু কাজ সেরে দেশে ফিরবেন আগামী ২০ নভেম্বর।  

জন্মদিনের এই দিনটি ছোট থেকেই বেশ আয়োজন করে কাটান তিনি। ছোটবেলায় মায়ের হাতের সেলাই করা জামা পরতেন।

মায়ের পর বড় বোন দিনা লায়লার হাতে বানানো জামা পরতেন। আলাদা আনন্দ নিয়ে ছোটবেলার সে সময়টা কাটিয়েছেন তিনি। এখন দিনটি অন্যরকমভাবে কাটান তিনি। অনেক মানুষের শুভেচ্ছা পান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা পান, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশ থেকেও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা পান তিনি।

এগুলো খুব উপভোগ করেন তিনি।

6666

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। বয়স যখন আড়াই বছর তখন তাঁর বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে চলে যান। সে সূত্রে তাঁর শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। সংগীতশিল্পী মায়ের কাছে শিখেছেন সংগীতের প্রাথমিক ব্যাকরণ। এরপর করাচির সংগীতজ্ঞ আব্দুল কাদের পিয়ারাঙ্গ ও হাবীব উদ্দিন খানের কাছে তামিল নেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে গান শুরু করেন রুনা। মঞ্চে রুনা লায়লার গান গাওয়ার শুরুটা একেবারে হঠাৎ করেই। করাচিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন। এখানে গান করবেন দিনা (রুনার বড় বোন)। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন দিনা। বিপদে পড়েন আয়োজকরা। শেষে বড় বোনের জায়গায় ছোট বোনকে দিয়ে গান গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে গানের শুরুর সময়টা মনে করে এই সংগীতশিল্পী বলেছিলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে শাস্ত্রীয় সংগীত করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ছয়। আমার তো সব কথা মনে নেই। পরে মায়ের কাছে শুনেছি, আমি নাকি তানপুরা নিয়ে খুব অভিজ্ঞদের মতো মঞ্চে বসে পড়ি। অথচ প্রথম মঞ্চে বসা আমার। সেদিন ধুমধাম গেয়ে মাত করেছিলাম। তানপুরা নিয়ে গান করেছিলাম। আর ওই তানপুরা ছিল আমার চেয়ে দুই গুণ বড়। সবাই আমার গানে মুগ্ধ হন। খুশি হয়ে সেদিন অনেকেই আমার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন।’

66666
মাছরাঙা টেলিভিশনের ‘রাঙা সকাল’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে রুনা লায়লা। ছবি : সংগৃহীত 

এরপর মাত্র ১২ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লেব্যাকের খাতায় নাম লেখান। প্রথম ছবির গানের স্মৃতি মনে করে মাছরাঙা টেলিভিশনের ‘রাঙা সকাল’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে রুনা লায়লা বলেছিলেন, ‘জুগনু’ ছবির গান হয়ে যাওয়ার পরে আমাকে একটা খাম দিল। খামে ৩০০ টাকা ছিল। আমার কোনো ধারণা ছিল না, গান গেয়ে টাকা পাওয়া যায়। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। এই টাকা তো আমি নেব না। গান গেয়ে টাকা নেব- এটা তো আমার প্রফেশন না। তখন তো বুঝতাম না, খারাপ লাগা কাজ করেছিল। তখন সবাই মিলে বোঝায় এটা আমার পারিশ্রমিক।’

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্লেব্যাক করেন পাকিস্তানের অনেক ছবিতে। ১৯৭৪ সালে ‘এক ছে বারকার এক’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু হয় তার। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা।

পাকিস্তানে নিসার বাজমির সুর করা অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা। রুনাকে দিয়ে নানা ধরনের গান করিয়েছেন এই সুরকার ও সংগীত পরিচালক। পরে মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান রুনাকে দিয়ে নিসার বাজমির সুর করা গান গাওয়ানোর পরিকল্পনা করে। প্রতিদিন একই সুরকারের ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ড করেন রুনা। পরে তা বিশ্বরেকর্ড হিসেবে স্থান পায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।

ক্যারিয়ারজুড়ে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। এসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। এ ছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।

রুনা লায়লার গাওয়া অসম্ভব জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’, ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম বন্ধু ভাগ্য হইলো না’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না’, ‘যখন আমি থাকবো না গো আমায় রেখো মনে’ ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY