প্রতীকী ছবি
ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে এবার কড়া অবস্থান নিতে চলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার গুগল, ফেসবুকের পরিচালক সংস্থা মেটাসহ অন্যান্য তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দেশটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী জানান, ডিপফেক প্রযুক্তি মোকাবেলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ১০ দিন সময় নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তত দিনে ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে খসড়া আইন তৈরি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। প্রস্তাবিত আইনে কড়া শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ডিপফেকসংক্রান্ত পরবর্তী বৈঠক ১ ডিসেম্বর। ওই দিন এই খসড়া আইন নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
ডিপফেককে ‘গণতন্ত্রের নতুন বিপদ’ বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, এই প্রযুক্তির ব্যবহার রুখতে মূলত চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে চাইছে সরকার। সেগুলো হলো চিহ্নিতকরণ, কিভাবে সেটি ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো যায়, কিভাবে বিষয়টিকে নথিবদ্ধ করা যায় এবং সচেতনতা।
বৈষ্ণব বলেন, ‘ডিপফেক প্রযুক্তিকে কিভাবে রোখা যায়, তার পথ সন্ধান করতে আমরা আজ থেকেই খসড়া বিধি তৈরি শুরু করছি। ১ ডিসেম্বর পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
’
এ ছাড়া সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত যে আইন বর্তমানে চালু রয়েছে, তারই পরিবর্ধিত অংশ হিসেবে নতুন আইনটিকে রাখা হবে।
এদিকে ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে সব স্তরেই। এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে বদলে দেওয়া হচ্ছে কারো শরীর, তো কারো মুখ। একজনের শরীরে অন্যের মুখ বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া ভিডিও। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে শালীনতার মাত্রা।
সম্প্রতি বলিউডের তিন অভিনেত্রী এই প্রযুক্তির শিকার হয়েছেন। ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে বলিউড অভিনেত্রী কাজলের একটি ডিপফেক ভিডিও। তাতে কাজলকে দেখা যাচ্ছে, ক্যামেরার সামনে পোশাক পরিবর্তন করতে। ভিডিও প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ভিডিওটি ফেক বা জাল ভিডিও বলে দাবি করেন অনেকেই।
এর পরই ইন্টারনেটের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলো ওই ভিডিও পরীক্ষা করে জানায়, ভিডিওটি আসলে একজন টিকটক তারকার। টিকটকে তিনি পোশাক পরার ভিডিয়ো পোস্ট করেন প্রায়ই। তেমনই একটি ভিডিওতে কাজলের মুখ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ ও রাশ্মিকা মন্দানার সঙ্গেও। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে সরব হয়েছিলেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।
সম্প্রতি ডিপফেক নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন কৃত্রিম মেধার মতো উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। আমাদের উচিত দায়িত্ববোধের সঙ্গে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা। কেউ যেন এ ধরনের প্রযুক্তি অপব্যবহার না করেন, তার জন্য এ ব্যাপারে উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার ঘটানো জরুরি।’ মোদি এ-ও জানান, তিনি ইতিমধ্যে কৃত্রিম মেধা ব্যবহারকারী কম্পিউটার সিস্টেম চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বলেছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা