ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ শুনবে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ

সংগৃহীত ছবি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন বিদ্যমান পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারী পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

ছয় বছর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। তখন প্রধান বিচাপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিচারপতি ছিলেন সাতজন। এখন প্রধান বিচারপতিসসহ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিচারপতি আছেন ছয়জন।

শুনানি কয়েক দফা পেছানোর পর গত ১৬ নভেম্বর রিভিউ আবেদনটি শুনানিতে ওঠে।

সেদিন রিভিউ শুনানিতে যাওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সদস্য সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মনজির মোরসেদ। প্রথা ভেঙে ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ রিভিউ আবেদনটির শুনানি হতে পারে কিনা, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তাঁর বক্তব্য ছিল দীর্ঘদিনের প্রথা হচ্ছে, আপিল বিভাগের রায় বা আদেশের পর সমান সংখ্যক বা বেশি সংখ্যক বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ শুনানি হয়। এ রিভিউ শুনানির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।

শুনানি পেছানোর আরজি জানিয়ে বলেছিলেন, কার্যত এখন সংসদ নেই। শুনানির পর রিভিউ আবেদনটি আদালত গ্রহণ করলেও সংসদ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর শুনানি হতে পারে। ততদিনে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হলে এ ব্যপারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

তখন প্রধান বিচারপতি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মতামত নেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, প্রবীর নিয়োগী, মুরাদ রেজা, তানজীবুল আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ শুনানির পক্ষে মত দেন।

তারা বলেন, বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ নিয়ে। আপিল বিভাগে এখন ছয়জন বিচারপতি নিয়েই পূর্নাঙ্গ বেঞ্চ। কতজন বিচারপতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ, সিটি বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট বিধিতে বেঞ্চের কথা বলা আছে। বিচারপতির সংখ্যা কতজন হবে সেটি বলা নেই।

তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী আইনি যুক্তিতে দ্বিমত না করলেও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন সর্বোচ্চ আদালতকে। এ আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, সাংবিধানিক এবং বিধিগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সমান সংখ্যক বা বেশি সংখ্যক বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়াটাই ভাল। প্রথা অনুযায়ী তাই চলে আসছে।

তখন আদালত মতামত জানানো আইনজীবী ও আইন কর্মকর্তাদের মতামতের স্বপক্ষে লিখিতভাবে রেফারেন্স (নজির বা আইনি উদাহরণ) জমা দিতে বলে আদেশের জন্য রেখেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় এ রিভিউ শুনানি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানালেন আপিল বিভাগ।

জানতে চাইলে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, “বিদ্যমান পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এখন আদালত রিভিউ শুনানির তারিখ দিলে আমি শুনানি করব।”

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।

এরপার এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছর রায়ের রিভিউ শুনানি করতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। পরে ২৮ আগস্ট সে আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালতে। চেম্বর আদালত ওই বছর ২০ অক্টোবর রিভিউ শুনানির তারিখ দেন। এর পর থেকে রিভিউ মামলাটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠছে। এর মধ্যে কয়েক দফা শুনানির তারিখ পেছানো হয়। সর্বশেষ গত ৯ নভেম্বর রিটকারী পক্ষের সময় আবেদনে শুনানি পিছিয়ে ১৬ নভেম্বর রাখা হয়েছিল। সেদিন বেঞ্চ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর সিদ্ধান্ত জানালো আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের প্রত্যেক বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় রিভিউ আবেদন শুনানি বা আদেশের জন্য রাখা হয়। এ নিয়ম ধরলে আগামী বৃহস্পতিবার এ রিভিউ আবেদনটি শুনানিতে উঠতে পারে।

LEAVE A REPLY