ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া নারীদের বেশির ভাগই অন্তঃসত্ত্বা।

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই নারী। চারজনের বয়স ৪৫ বছরের নিচে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট এক হাজার ৫৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী ও ৪৩ শতাংশ পুরুষ। মৃত নারীদের বেশির ভাগই ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সকে নারীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত সময় ধরা হয়। গর্ভধারণ করলে একজন নারীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

ফলে যেকোনো সংক্রমণ হলে তা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া নারীর বেশির ভাগই অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত। তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সব ধরনের রোগেই বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

কারণ এ সময় তাঁদের শরীরে রক্ত কমে যায়। অনেকের অ্যানিমিয়া হয়, তখন শরীরে স্বাভাবিক অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে।

মুশতাক হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণও এটি। তাই এই সময় বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা কেউ থাকলে তাঁর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, গর্ভের সন্তান অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে।

এ কারণে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে। এ সময় পেটে বা বুকে পানি জমলে অন্তঃসত্ত্বা নারী নিঃশ্বাস নিতে পারেন না। এটিও মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

মৃত্যু ৭, হাসপাতালে ১০৯৪

গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে ২৫৩ জন ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে ৮৪১ জন। আর মারা গেছে সাতজন।

নতুন রোগীদের নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে চার হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি এক হাজার ১১১ জন। ঢাকার বাইরে তিন হাজার ১৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭৯২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু এক হাজার ৫৭৭ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নভেম্বরের ২৩ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৪ হাজার ৬১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২২৯ জনের। নভেম্বরের এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭৮.৮২ শতাংশ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। ২১.১৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। একই সময় মৃতদের ৫৩ শতাংশ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালের।

গর্ভকালীন মৃত্যুঝুঁকি তিন গুণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তাবিহা বিনতে হান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, গর্ভকালীন নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যে কারণে এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তীব্রতার মাত্রা এবং মৃত্যুহার অন্য রোগীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে যেতে পারে। এতে মা ও গর্ভের সন্তানের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

ডা. তাবিহা বিনতে হান্নান বলেন, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়া গর্ভে সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বিলম্বিত হতে পারে। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে একলামশিয়া, প্রি-একলামশিয়ার মতো জটিলতা, এমনকি সময়ের আগেই অপরিপক্ব অবস্থায় বাচ্চার জন্ম হতে পারে। তা ছাড়া গর্ভকালীন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে মায়ের লিভার এনজাইমগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেড়ে যেতে পারে এবং রক্তক্ষরণ হলে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।

LEAVE A REPLY