জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ থাবায় পড়েছে পুরো পৃথিবী। যার ক্ষতিকর প্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে বিশ্ব জিডিপি। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অর্থনীতি থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ছিন্নভিন্ন করেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এএফপির খবরে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিউইয়র্কের বেসরকারি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ডেলাওয়্যারের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
গবেষণা পরিসংখ্যানগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফলাফলকে প্রতিফলিত করে। যেমন কৃষি ও উৎপাদনে ব্যাঘাত এবং উচ্চ তাপ থেকে উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর ছড়িয়ে পড়া প্রভাব।
ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক জেমস রাইজিং বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার প্রভাব বেশিরভাগই দরিদ্র দেশগুলোর ওপর পড়েছে।
আরও বলেছেন, আমি আশা করি, এই তথ্যগুলো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া দেশগুলোর মোকাবিলা করার জন্য এবং তাদের জরুরিভাবে যে সমর্থন প্রয়োজন তা তুলে ধরতে যথেষ্ট হবে।
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ (১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার) ক্ষতি হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো ৮ দশমিক ৩ শতাংশের উচ্চ জনসংখ্যা-জিডিপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কারণ তাদের জিডিপির যথাক্রমে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ২ শতাংশ হারিয়েছে।
অন্যদিকে লাভবান হয়েছে বেশ কিছু উন্নত দেশ। ইউরোপ গত বছর জিডিপিতে প্রায় ৫ শতাংশ নেট লাভ করেছে। তবে রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে, উষ্ণায়নের ফলে এ ধরনের লাভগুলো ক্ষয় হতে চলেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো গত ৩০ বছরে মোট ২১ ট্রিলিয়ন ডলারের মূলধন এবং জিডিপির সম্মিলিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বের মোট ২০২৩ জিডিপির প্রায় অর্ধেক।
টেকসই ও কার্বন নিরপেক্ষ পরিবেশ গড়তে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে শুরু হচ্ছে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৮। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়োজনে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
জাতিসংঘের অফিসিয়াল নথিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য সারা দেশ থেকে হাজার হাজার প্রতিনিধিসহ বিশ্বনেতারা যোগ দেবেন। সম্মেলনে ৭০ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি উপস্থিতি থাকবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আমরা একটি মারাত্মক চক্রের (জলবায়ু পরিবর্তন) মধ্যে আটকা পড়েছি।
বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করতে, জলবায়ু বিশৃঙ্খলা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি যুগের অবসান ঘটাতে নেতাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। তবে শীর্ষ সম্মেলনের কেন্দ্রীয় ফোকাস হবে জলবায়ু সংকটের জ্বালানি দূষণকারী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধে প্রতিশ্রুতবদ্ধ হওয়া।
ধনী দেশগুলোর সাহায্যের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোকে অগ্রগতিতে সহায়তা করাও এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ কবলে পড়েছে বাংলাদেশও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে। তবুও দেশটির প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অর্থায়ন করতে চায়।
সরকারি প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য রোববার আরব নিউজকে জানিয়েছেন, কপ-২৮ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অর্থায়ন ব্যয়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।