দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বর্তমান সংসদ-সদস্যদের সম্পদ বহুগুণ বেড়েছে। মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চারগুণ। কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর সম্পদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। আর নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪২ গুণ।
আয় কমলেও ইনুর সম্পদ বেড়েছে ৪ গুণ
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ-সদস্য হাসানুল হক ইনুর আয় তেমন না বাড়লেও গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ প্রায় চারগুণ বেড়েছে। আর ১০ বছরে তার স্ত্রীর সম্পদ ২৯ গুণ বেড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জাসদ সভাপতি ইনুর আয়ের বড় অংশ ব্যবসা, বেতন-ভাতা, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ও টিভি টকশো থেকে আসে। এবার তিনি ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৬২ হাজার ১৪৯ টাকা; বেতন-ভাতা থেকে ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা; টিভি টকশো ও ব্যাংক সুদ থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ৮০৪ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৬২৩ টাকা। তার বার্ষিক আয় একটু কমলেও পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়ে প্রায় চার গুণ হয়েছে।
২০১৮ সালে ইনুর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ৮৬৬ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার ২২৯ টাকা। তার নগদ অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫৫ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা রয়েছে ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯২৪ টাকা, ২৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ১৯৭৪ সালের দাম অনুযায়ী সোনার দাম দেখানো হয়েছে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া তার ৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ আছে। আর রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী হাসানুল হক ইনুর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে অবিশ্বাস্য ভাবে। স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ২৫৮ টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থ ১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৩ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৭০ টাকা। এছাড়া তার ৭ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৫ টাকার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তার ৪০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ১৯৭৪ সালের বাজারমূল্য অনুযায়ী সোনার দাম দেখানো হয়েছে ১২ হাজার টাকা। হলফনামায় ইনু তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৬০ লাখ ৩ হাজার ২৫৮ টাকা। আর দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৯০ টাকা।
গোলাপের নগদ অর্থ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের আগে কোনো গাড়ি না থাকলেও ২০১৮ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে কোটি টাকার গাড়ি কিনেছেন। গত পাঁচ বছরে তার নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চারগুণ বেড়েছে। তার নির্বাচনি হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মাদারীপুরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ নিজের ও স্ত্রী গুলশান আরার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন। ২০১৮ সালে নিজের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৫১ লাখ ৯ হাজার ৬৯০ টাকা। বর্তমানে গোলাপের জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৯৩১ টাকা। গোলাপের নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৩১ গুণ।
২০১৮ সালের হলফনামায় স্ত্রীর কাছে ৯৮ হাজার ১১৮ ইউএস ডলার থাকার কথা বলা হলেও বর্তমানে তার কাছে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা নেই। গোলাপ ও গুলশান আরার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ বেড়েছে। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক একচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার আগে গোলাপের নামে ছিল ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭২ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ছিল ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। গোলাপের বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯২ টাকার এবং স্ত্রীর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকার মিরপুর ও উত্তরায় গোলাপের দুটি ভবন উল্লেখ করা হয়েছে।
না.গঞ্জে ১৫ বছরে বাবুর সম্পদ বেড়েছে ৪২ গুণ
নারায়ণগঞ্জ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে ৪ তারিখ সকাল সাড়ে দশটায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের জমাকৃত ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজনের মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। বৈধ চারজনের মধ্যে হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর গত ১৫ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪২ গুণ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশা হিসেবে বাবু উল্লেখ করেন একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় করেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর চিকিৎসা পেশা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি নগদ ৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সে সময়কার স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অকৃষি জমি যার মূল্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের কোনো সম্পদ ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখিত তার স্ত্রীর নামে শূন্য থেকে গত ১৫ বছরে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৫ শতাংশ অকৃষি জমি যার বাজার মূল্য ৯৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং ৩৯ শতাংশ জমির ওপর একতলা আধা পাকা দালান যার হলফনামায় উল্লেখিত মূল্য ৩৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং বাবুর নামে দেখানো হয় ৩৬১ শতাংশ অকৃষি কৃষি জমি যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২.২ শতাংশ জমির উপর নির্মিত দালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকায় রয়েছে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্লাট যার মূল্য ৮১ লক্ষ টাকা এবং পূর্বাচল রাজউক নিউ মডেল টাউনে ৪১ লাখ টাকা মূল্যের ১০ কাঠার একটি প্লটসহ মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার টাকার সম্পত্তি।
ওই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন তার হলফনামায় উল্লেখ করেন স্বশিক্ষিত এবং রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী। পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা না হওয়ায় হেরিটেজ সম্পত্তি হিসাবে দেখানো হয়েছে। তার ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ও ব্যাংকে জমা ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে একটি গাড়িসহ দুই ভরি সোনা ও ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হলফনামায় দেখানো হয়েছে। আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ হয় আরো দুজন তৃণমূল বিএনপির আবু হানিফ হৃদয় এবং জাকের পার্টির শাহজাহানের।