সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন তাইজুলও

সাকিব থাকুন বা না থাকুন, তাইজুল সব সময়ই একই রকম উজ্জ্বল।

চাইলে তাঁদের দুজনের মধ্যে অনেক মিলই খুঁজে নেওয়া যায়। তবে একটি জায়গায় বোধ হয় রঙ্গনা হেরাথের চেয়ে সৌভাগ্যবানই বলা যায় তাইজুল ইসলামকে। নিজেদের সদ্য সাবেক স্পিন বোলিং কোচের মতো অন্তত টেস্ট খেলার সুযোগের জন্য কাক প্রতীক্ষায় থেকে থেকে ১১টি বছর পার করে দিতে হয়নি বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি স্পিনারকে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিনসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ৪৩টি টেস্ট খেলা হয়ে গেছে তাইজুলের।

অথচ ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে এক দশকেরও বেশি সময় হেরাথ টেস্টে ছিলেন অনিয়মিত। মুত্তিয়া মুরালিধরন ছিলেন যে! ২০১০ সালের জুলাইতে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই অফস্পিনার টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানার আগপর্যন্ত হেরাথ খেলেছিলেন মোটে ২২ টেস্ট। 

শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট একই ম্যাচে দুজনকে খেলিয়েছে মাত্র ১৫ ম্যাচে। হেরাথের সঙ্গে তুলনায় গেলে খেলার সুযোগ না পাওয়ার বঞ্চনায় অন্তত পুড়তে হয়নি তাইজুলকে।

মুরালির বিদায়ের পর ৩২ বছর বয়সে নতুন জীবন পায় লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনারের টেস্ট ক্যারিয়ার। এর আগে ৭১ উইকেট পাওয়া এই লঙ্কান কিংবদন্তি সাফল্যের সব পাপড়ি মেলা ফুল হয়ে ফোটেন মূলত মুরালি-পরবর্তী সময়ে। ৭০ টেস্ট খেলে নেন ৩৫৯ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ৪০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক পেরোনো হেরাথের সঙ্গে এই একটি জায়গায়ই শুধু অমিল তাইজুলের।

না হলে তাঁদের ভাগ্য প্রায় কাছাকাছিই। হেরাথ যেমন ক্যারিয়ারের সুদীর্ঘ সময় মুরালির ছায়ায় ঢাকা পড়ে থেকেছেন, তেমনি সাকিব আল হাসানের কারণে প্রচারের আলো খুঁজে নেয়নি তাইজুলকে। এমনকি মেহেদী হাসান মিরাজও তাঁকে আরো আড়ালে ঠেলে দিয়েছেন। তবে নীরবে ঠিকই নিজের কাজটি করে গেছেন তাইজুল। যেভাবে সেটি এত দিন ধরে করে এসেছেন, তাতে চন্দিকা হাতুরাসিংহেরও তাঁকে হেরাথের মতো বলেই মনে হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ বলেছেন, ‘ওকে নিয়ে হেরাথ ট্যাকটিক্যাল অনেক কাজ করেছে। তা ছাড়া যেভাবে ব্যাটারদের সেট-আপ করে, তা অনেকটা হেরাথের সঙ্গেও মিলে যায়।’ মিলে যায় দীর্ঘ সময় অন্যের ছায়ায় ঢাকা পড়ে থাকার ব্যাপারটিও। তাই বলে পারফরম্যান্সে যে তাইজুল পিছিয়ে ছিলেন না, সেটিও বলতে ভোলেননি হাতুরাসিংহে, ‘ওকে নিয়ে সাধারণত সেভাবে কেউ কথা বলে না, কারণ আমাদের আরেকজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার আছে। সাকিবের কারণে বেশির ভাগ ম্যাচেই ওকে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে খেলতে হয়েছে। তবুও ওর রেকর্ড অসাধারণ। টেস্টে দুই শর মতো উইকেট হয়ে গেছে ওর।’

১৮৭ উইকেট পাওয়া তাইজুল যে সাকিবের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়েছেন, পরিসংখ্যানেও আছে এর সাক্ষ্য। এই দুই বাঁহাতি স্পিনার একসঙ্গে খেলেছেন ২৪ টেস্ট। কেউ কারো চেয়ে খুব এগিয়েও নেই, আবার পিছিয়েও নেই। এই ম্যাচগুলোতে সাকিব যেখানে নিয়েছেন ৯৪ উইকেট, সেখানে তাইজুলের শিকার সংখ্যা ৯৩। এই ২৪ ম্যাচের মধ্যে সাকিব ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন আটবার, তাইজুল চারবার। সাকিবের অনুপস্থিতিতেও তাইজুল আটবার ইনিংসে পাঁচ শিকার ধরেছেন। সাকিবকে ছাড়াই খেলা ১৯ টেস্টে তাঁর উইকেট ৯৪টি। অর্থাৎ সাকিব থাকুন বা না থাকুন, তাইজুল সব সময়ই একই রকম উজ্জ্বল।

LEAVE A REPLY