গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনীত প্রস্তাবটি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে দেড় শতাধিক দেশ। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এই প্রস্তাব পাশ হয়। তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আরব দেশ মিসর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্কসহ মোট ১৫৩টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের ১০টি সদস্য এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, অস্ট্রিয়া, গুয়াতেমালা, লাইবেরিয়া, নাউরু, পাপুয়া নিউ গিনি, প্যারাগুয়ে, মাইক্রোনেশিয়া ও চেক রিপাবলিক। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনাসহ ২৩টি দেশ।
মিসরের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি দাবির পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মতো সাধারণ পরিষদে পাশ হওয়া প্রস্তাব প্রতিপালনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই সদস্য দেশগুলোর।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পর এবার ফিলিস্তিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী সহিংস ইসরাইলিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেলকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
সোমবার ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক নীতির প্রধান কর্মকর্তা জোসেফ বোরেল বলেছেন, পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী চরমপন্থীদের সহিংসতায় ইইউ উদ্বিগ্ন এবং জেরুজালেমে আরও ১ হাজার ৭০০ আবাসন ইউনিট অনুমোদন করায় ইসরাইলি সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
পশ্চিম তীরে আরও আবাসন তৈরির অনুমোদনকে ব্রাসেলস আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর জোসেপ বোরেল গণমাধ্যমের কাছে বলেন, কথা থেকে কাজে যাওয়ার সময় এসেছে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে আমরা যেসব ব্যবস্থা নিতে পারি তা শুরু করার সময় এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ—বোরেলের এই প্রস্তাব ও উদ্যোগ সম্পর্কে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সবাই সম্পূর্ণ উৎসাহী নন। এর পরও তিনি ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণে জড়িত প্রধান প্রধান বসতি স্থাপনকারীদের একটি তালিকা তৈরি করতে ইইউ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করবেন। এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব জমা দেননি জোসেপ বোরেল। তবে মানবাধিকার হরণ করায় বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দেবেন।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানাননি বোরেল। তবে ইইউ কর্মকর্তারা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং হাঙ্গেরির মতো ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর কয়েকজন কূটনীতিক।