দ্বৈত নাগরিকত্বের ৫ অভিযোগ : রায় হয়েছে একটির, বাকি চার

নির্বাচন ভবন। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমানের প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

দ্বৈত নাগরিকত্বের ৫ অভিযোগ একটির রায়, চারটি বাকি

শুনানি শেষে ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কালাম আজাদ (এ কে আজাদ), বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার তাঁদের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, যাচাই-বাছাইকালে বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি ইসিতে আপিল করেন। আর রিটার্নিং অফিসাররা বৈধ ঘোষণা করলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বাকি চারজনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে ইসিতে আপিল করেন। তাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পৃথক চারটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন আপিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।

সিলেট-৩ আসন

দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমানের প্রার্থিতা বহাল রেখেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। হাবিবুর রহমানের দ্বৈত নাগরিত্বের অভিযোগ তুলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়ে ইসিতে আপিল করেন ওই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক।

প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত নির্বাচনেও আতিকুর রহমান একই অভিযোগ তুলেছিলেন। এবারও একই অভিযোগ করেছেন। আমাকে হয়রানি করার জন্য এমন অভিযোগ করছেন তিনি। আসলে আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই। শুনানিতে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।

বাকি চারজনের বিষয়ে ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পৃথক চারটি চিঠিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে ইসির নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্থানীয় দূতাবাসের মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা দ্রুত পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।

ফরিদপুর-৩ আসন

ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ মনোনয়নপত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সংক্রান্ত (আমেরিকা) তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ এনে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন ওই আসনে নৌকার প্রার্থী শামীম হক। 

শামীম হকের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ আনেন এ কে আজাদ। তিনি তাঁর নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করেছেন বিধায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করা হয়। ইসি দুই প্রার্থীর আমেরিকা ও নেদারল্যান্ডসের (ডাচ) দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।

শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের জন্য গত ৯ নভেম্বর আবেদন করেছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু এ কে আজাদের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, যেসব কাগজপত্র শামীম হক জমা দিয়েছেন সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

নিয়ম অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ছাড়তে হলে সে দেশের কাউন্সিলরের কার্যালয় বা দেশটির ঢাকার দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। শামীম হক আবেদন কোথায় জমা দিয়েছেন বা কোন দপ্তর তা গ্রহণ করেছে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

অভিযোগকারীপক্ষের দাবি, শামীম হক ইসিতে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের একটি ই-মেইলের কপি জমা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ‘হল্যান্ডেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে’ আবেদন করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই ই-মেইলে ‘হল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ বলা হয়েছে। কিন্তু দেশটির বর্তমান নাম নেদারল্যান্ডস। এখানেই তাঁদের সন্দেহ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নানামুখী অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। একসময় আমার নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্ট ছিল। ভোট করার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার আছে। সেসব আপিলে দাখিল করা হয়েছে।’ ইসির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে এ কে আজাদের বিষয়ে শামীম হকের করা আপিলের শুনানি গতকাল পর্যন্ত হয়নি। 

বরিশাল-৪ আসন

বরিশাল-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ মনোনয়নপত্রে তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্বের (অস্ট্রেলিয়া) তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ। যাচাই-বাছাই শেষে শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে শাম্মী আহমেদ ইসিতে আপিল করেন।

ইসি আপিলকারীর (অস্ট্রেলিয়া) দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয়। ইসির নির্দেশনা মোতাবেক অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় শাম্মী আহমেদের দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে ইসি সচিবালয়ে প্রেরণে জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।

শুনানি শেষে নির্বাচন ভবনে কথা হয় প্রার্থী শাম্মী আহমেদের আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য এরই মধ্যে শাম্মী আহমেদ চিঠি দিয়েছেন। তিনি আগের এনআইডি দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট করেছেন। ফলে আশা করি, ইসির সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা ফিরে পাবেন শাম্মী আহমেদ।’

বরিশাল-৫ আসন

ইসির কার্যক্রম থেকে জানা গেছে, বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং তাঁর স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও সম্পদের তথ্য গোপানের অভিযোগ এনেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ ফারুক। গত ১০ ডিসেম্বর আপিল শুনানিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁর স্ত্রীর দ্বৈত নাগরিকত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদের তথ্য ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সহায়তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সাদিক আবদুল্লাহর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। আপিলে অভিযোগকারী সাদিক আবদুল্লাহর নামে দ্বৈত নাগরিকত্বের কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। আমেরিকান নাগরিকের একটা কাগজ দেখানো হয়েছে। সে নাগরিকের নাম শেওয়াদ আবদুল্লাহ, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নয়। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বিশ্বাসযোগ্য কাগজ দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। আমরা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবেন মেনে নেব।’

LEAVE A REPLY