রাজধানীর বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও ডিমের দাম আবার বেড়ে গেছে। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। চিনি ও ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় বাজারে এই মসলা পণ্যের দাম কমলেও রসুন বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
বাজারে সরবরাহ বাড়ায় নতুন আলুর দাম কিছুটা কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মহাখালী কাঁচাবাজার ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন এখন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সোনালি ও ব্রয়লার দুটির দামই বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে সোনালি মুরগি ছিল মানভেদে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, এখন দাম বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা হয়েছে।’
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়ার কারণে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে।
তবে এর চেয়ে কম দামে ডিম বিক্রি করলে খামারির কিছু থাকবে না। আজ (গতকাল) পাইকারিতে প্রতিটি ডিম ৯ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।’ বাজারে ডিমের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমেছে।
মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে খুচরায় ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ও পুরনো দেশি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। দেশি রসুন কেজি ২৪০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২২০ টাকা কেজি।
বাড্ডা বাজারের পেঁয়াজ ও আলু ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চলে আসার কারণে পুরনো পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমেছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম পুরনো পেঁয়াজের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই ৯০ শতাংশ মানুষ মুরড়িকাটা পেঁয়াজ কিনছেন। নতুন আলুর দাম বেশি হওয়ার পরও ক্রেতারা এটি বেশি কিনছেন।’
মহাখালী কাঁচাবাজারের মুদি ব্যবসায়ী নির্মল ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দাম বাড়ার পর থেকে ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনা একদম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে গত দুই-তিন দিনে পুরনো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমেছে। দাম বাড়ায় রসুনের বিক্রিও কমেছে।’
সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়। কিন্তু ভালো দামের আশায় এ বছর কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টরে এ বছর আবাদ করা হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় আট লাখ টন। দু-তিন মাস দেশের বাজারে এই পেঁয়াজ থাকে। এরপর মার্চে হালি পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৮ লাখ টন।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ভারত গত শুক্রবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম দ্বিগুণ বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ২২০ টাকায় ওঠে। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তরের লাগাতার অভিযান এবং মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
হিলিতে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে
হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে। গতকাল হিলি বাজার ঘুরে বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা যায়। সরবরাহও বেড়েছে। পেঁয়াজের পাতা কেজিতে ৩০ টাকা কমে এখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি শুকনা পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। গত রবিবার হাটবার বাজারে এসে দেখি, দেশি নতুন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই সেই দিন আমি ৪০ টাকায় হাফ কেজি পেঁয়াজ পাতা কিনেছিলাম। আজ (গতকাল) মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৯০ টাকায় এক কেজি নিলাম।’
চিনি ও তেলের দাম বাড়তি
প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে ১৩ টাকা বেড়ে ১৪৮ টাকা হয়েছে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২০ টাকা বেড়ে ৮৪৫ টাকা।
সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত, দামও কমেছে
বাজারে এখন প্রচুর শীতের সবজি। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। খুচরা বাজারে মানভেদে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো ৮০ থেকে ৯০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।