যুবাদের এশিয়া জয়

প্রতিপক্ষের ৯ উইকেট তুলে নেওয়ার পর যেন আর তর সইছিল না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের। অমিদ রেহমান টেস্ট মেজাজে কিছু বল ঠেকিয়ে বাংলাদেশের উদযাপন যা একটু বিলম্বিত করলেন। সেই অমিদ রেহমানই উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন লং অনে। দুই ফিল্ডারের ক্যাচ ধরার লড়াইয়ে মোহাম্মদ শিহাব বল তালুবন্দি করেই দিলেন দৌড়। তার সঙ্গে উল্লাসে মাতলেন ক্রিকেটাররা, ডাগআউট থেকে পতাকা নিয়ে ছুটলেন বাকিরা, সঙ্গে দৌড় দিলেন টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরাও। পরে প্রবাসী দর্শকদের নিয়েও মরুর বুকে ক্রিকেটাররা করলেন উল্লাস। রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো যুব এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলুর সেঞ্চুরি (১২৯) এবং চৌধুরী মো. রিজওয়ান (৬০) ও আরিফুল ইসলামের (৫০) হাফ সেঞ্চুরিতে আট উইকেটে ২৮২ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২৪.৫ ওভারে মাত্র ৮৭ রানে আলআউট হয়ে ১৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে স্বাগতিকরা। যুব এশিয়া কাপে আগের ৯ আসরের আটটিতেই শিরোপা জিতেছে ভারত। একবার ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। তবে ভারতের বাইরে এককভাবে যুব এশিয়া কাপ জেতা একমাত্র দল ছিল এতদিন আফগানিস্তান। এবার তাদের সঙ্গী হলো বাংলাদেশও। ২০২০ সালে যুব দলই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল। এবার এশিয়া কাপেও প্রথম সাফল্য আনল সেই যুবারা। ফাইনালের পথে বাংলাদেশ হারিয়েছে গ্রুপপর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও শ্রীলংকাকে। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে চার উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে মাহফুজুর রহমানের দল। ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উড়িয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরল যুব টাইগাররা।

আগের চার ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা আশিকুর নিজের সেরাটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তিনি করলেন ১২৯ রান। ১২ চার ও এক ছক্কায় সাজানো ১৪৯ বলের ইনিংসে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। দুটি করে ফিফটি-সেঞ্চুরিতে ১২৬ গড়ে আসরের সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন আশিকুর।

দুবাইয়ে ছিল ছুটির দিন। সঙ্গে ফ্রিতে ফাইনাল দেখার সুযোগ। সব মিলিয়ে গ্যালারি ছিল পূর্ণ। কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য টস জিতে ফিল্ডিং নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। শুরুতে বাংলাদেশের ওপেনার জিসান আলমকে ফেরানোর পর ভালোভাবেই চেপে বসেছিল তারা। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদের রান ছিল মাত্র ২৭! দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নেন আশিকুর ও রিজওয়ান। ১২৫ রানে ভাঙে এই জুটি। ৭১ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৬০ করে ফেরেন রিজওয়ান। চারে নেমে রানের গতি বাড়ান আগের ম্যাচে ৯৪ রানের ইনিংস খেলা আরিফুল ইসলাম। ৩৯ বলে পূর্ণ করেন পঞ্চাশ। পরের বলেই অবশ্য আউট হন। আরিফুল ফেরার আগেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আশিকুর। ১২৯ বলে ১০ চারে তিন অঙ্কে পৌঁছান এই ওপেনার। পরের ২০ বলে তিনি করেন আরও ২৯ রান। এ সময় দুই চারের সঙ্গে মারেন নিজের একমাত্র ছক্কা। অধিনায়ক মাহফুজুর ১১ বলে ২২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আয়মান আহমেদ সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে চমক দেখানো স্বাগতিকরা ফাইনালে লড়াই করতে পারেনি। বিশাল লক্ষ্যে নেমে তাদের মাত্র দুই ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারে। সর্বোচ্চ ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন ধ্রুব পরেশ্বর। ১১ রান করেন ওপেনার আকশাত রায়। বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন মারুফ ও রোহানাত। ইকবাল ও পারভেজ ধরেন দুটি করে শিকার।

LEAVE A REPLY