রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে নাশকতার আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন মা-ছেলেসহ চারজন। মঙ্গলবার ভোরে তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। আগুনে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মৃতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন-নাদিরা আক্তার পপি (৩২) ও তার ৩ বছরের ছেলে ইয়াসিন। বাকি দুজন পুরুষ। এদের মধ্যে একজনের স্বজনরা লাশের দাবি করেছেন। এ ঘটনায় ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের এসপি আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, অগ্নিসংযোগে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, যারা অবরোধ-হরতাল দিয়েছে, তারাই রেলে আগুন দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। এর আগেও তারা এভাবে ট্রেনে নাশকতা করেছিল।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে রেলে অন্তত সাতটি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। হরতাল-অবরোধে যাত্রীদের জন্য এতদিন নিরাপদ যান ছিল ট্রেন। এই ট্রেনেও সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার থাবা পড়েছে। এতে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ট্রেন ভ্রমণও।
আরও জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, পেট্রোল ব্যবহার না করলে এত দ্রুত আগুন ছড়ানো সম্ভব নয়। এ ঘটনায় নাশকতার আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রেলওয়ের যুগ্ম-মহাপরিচালক (অপারেশন) এএম সালাহ উদ্দীন বলেছেন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রীবেশে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে উঠেই হয়তো দুর্বৃত্তরা ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়েছে। ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার লিটন কুমার সাহা ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, ট্রেনে আগুনের কারণ জানতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। পেট্রোল নাকি গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে, এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে তিনটি ইউনিট গিয়ে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নির্বাপণ করে। ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে খিলক্ষেতে এলে বগিগুলোতে আগুন দেখতে পান যাত্রীরা। তারা চিৎকার শুরু করলে চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান। আগুন নেভানোর পর ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রেনের চাকায় আগুন লেগে গেলেও ট্রেনের বাইরে কোনো আগুন লাগেনি। আগুন শুধু ট্রেনের বগির ভেতরে ছিল। তাই আমরা সন্দেহ করছি, ভেতর থেকেই লেগে থাকতে পারে।
পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, আমরা সন্দেহ করছি, তিন ব্যক্তি বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনের তিনটি বগিতে উঠেছিলেন। তারা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারেন। তিনি জানান, বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কারা সেখান থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন এবং তেজগাঁও স্টেশন থেকে কারা নেমেছেন তা জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে এই ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কি না-এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মহল বিশেষের প্রশ্রয় ছাড়া এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা অবরোধ করেছে, যারা হরতাল করছে তারাই এটি করছে। এর আগে যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা ধরাও পড়েছিল।
গাজীপুরের লাইন যারা কেটে ফেলেছিল, সেখানেও একজনকে হত্যা করা হয়েছে। আজকেও যে ঘটনাটি, এটিকেও আমি সরাসরি হত্যা বলতে চাই। যারা করেছে তারা হরতাল ও অবরোধকারীদের একটি অংশ বলে আমি মনে করি। শুধু একটি অংশ নয়, এটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অংশ। তার অংশ হিসাবেই তাদের যারা অনুসারী রয়েছে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করে।
বিএনপির বেশিরভাগ নেতা জেলে রয়েছেন। তারপরও কাদের নির্দেশে এই ধরনের নাশকতা হচ্ছে-এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যারা হরতাল করছে, যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে, নাশকতা করছে; বিদেশি নেতাদের নির্দেশে এই দেশে তাদের যে এজেন্ট রয়েছে, অনুসারীরা রয়েছে, তারাই যে এটা করছে এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কোনো অবস্থায়ই পার পাবে না। তারা অতীতেও পার পায়নি। ট্রেনে, বাসে যেসব জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে, এর প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা প্রত্যেককে শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা স্বীকারও করেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আমাদের সতর্কতা ছিল। তারপরও যেহেতু এই ঘটনা ঘটেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিআইডি, ডিবি এবং রেলওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে, যেন পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা না ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আহত একজনের কাছে যেটুকু জানতে পেরেছি, ভেতরে যারা ছিল, তারাই সেখানে আগুন দিয়েছে। সে নিজেও সেখানে ছিল। সে দেখেছে সিটের ভেতরে প্রথম আগুন দিয়েছে এবং সে আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে গেছে। যেহেতু ভোর ছিল অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমরা দেখেছি একজন মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন, হয়তো বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ভোর ৫টার সময় ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে যখন রওয়ানা করে বনানী-কাকলির কাছাকাছি এলে ‘জ’ বগির ভেতরে যাত্রীরা প্রথমে আগুন দেখতে পায়। অনেকেই লাফ দিয়ে বগি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। নিহত দুজনকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা করছে সিআইডি। বীভৎসভাবে পুড়ে যাওয়ায় তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে যেন পরবর্তী সময়ে শনাক্ত করা যায়।
এদিকে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে নিজের চাচা বলে দাবি করেছেন বেলাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে তিনি বলেন, পরিচয় না পাওয়া দুই লাশের একটি তার (বেলাল আহমেদ) চাচা রশিদ ঢালী। তবে পুলিশ বলছে, শনাক্ত করতে না পারা দুই লাশ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই কার লাশ। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন। ডিএনএ পরীক্ষার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে, দাবি করা লাশটি রশিদ ঢালীর কিনা।
বেলাল আহমেদ জানান, পায়ে পরা জুতা, মুখের আকৃতি দেখে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন একটি লাশ তার চাচা রশিদ ঢালীর। তার চাচা মালামাল কেনার জন্য সোমবার রাতে নেত্রকোনা থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। ভোর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, আব্দুর রশিদ ঢালির বাসা নেত্রকোনা শহরের নাগড়া এলাকায়।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাক্তার আনোয়ারুল হকের দাবি-ঢালি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। এরআগে তিনি যুবদলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শহরের বড় বাজার এলাকায় ব্যবসা করতেন। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, নেত্রকোনা সদরের দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের বরুনা গ্রামের নাদিয়া আক্তার পপি ও তার ছেলের মরদেহ তার ভাই হাবিবুর রহমান শনাক্ত করেছেন। আর আব্দুর রশিদ ঢালির মরদেহটি তার ভাতিজা শনাক্ত করেছেন বলে শুনেছি।
মঙ্গলবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, বিএনপির ডাকা হরতাল ও অবরোধে বাংলাদেশ রেলওয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। এতে করে যাত্রীবান্ধব রেলসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগে হরতাল, অবরোধ এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় একমাত্র রেলেই নিরাপদভাবে যাত্রী পরিবহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে রেলপথমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি রেলের ওপর কিছু নাশকতামূলক হামলা হয়েছে।
নিরাপদ যাত্রী চলাচলে হুমকি তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়েছে। তারা সপ্তাহে দুই দিন বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলোতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েছে। এই সময়গুলোতেই রেলের ওপর হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিরাপদ রেলযাত্রাকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।
রেলে দুর্ঘটনা কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলের নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। রেলপথের ব্যাপারে যেন সহযোগিতা করা হয়, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে নাশকতা ঘটালে রেলের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩-১৪ সালেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে।
নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতেই পারে। কিন্তু সহিংসতা করতে পারে না। তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী সেতু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের অনেক যন্ত্রাংশ চুরি করার নামে খুলে নেওয়া হয়েছে, যেন ট্রেন চলাচল করতে না পারে। তারা মনে করছে, এ ধরনের নাশকতা ঘটিয়ে মনে করছে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যদিও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু তারা কর্মসূচি না দিলে তো এটা হতো না।
ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত নুরুল হক ওরফে আব্দুল কাদের বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে রেলের পোশাক পরা ব্যক্তিরাই আগুন দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের আগে তারা ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে বগির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিলেন আর বিভিন্ন কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি বলেন, ট্রেনটি মহাখালী আসার আগে দুজন ব্যক্তি রেলের পোশাক পরিহিত অবস্থায় হাতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে কথা বলাবলি করছিল।
আমার ধারণা, তারা আগুন লাগিয়ে পাশের বগি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আগুন দেখতে পেয়ে নাখালপাড়া এলাকায় ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হই। নুরুল হকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় থাকেন। তিনি হামিম গ্রুপের পরিবহণ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। তার মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলে একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এতে ট্রেনটির দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর দুদিন পর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ‘যমুনা এক্সপ্রেসে’ আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনটির দুটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২২ নভেম্বর ‘উপবন এক্সপ্রেস’ সিলেট স্টেশনে থাকা অবস্থায় আগুন দেওয়া হয়।
এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও একটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া চলতি মাসের ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে দুর্বৃত্তরা ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলে। এতে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় চলাচলকারী ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’-এর ছয়টি বগি ইঞ্জিনসহ আলাদা হয়ে যায়। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং প্রায় ৫০ জন যাত্রী আহত হন।
মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, দুর্বৃত্তদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র লতিফুর রহমান রতন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদ ইকবালের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও যাত্রী হত্যার ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
কুড়িগ্রাম-রংপুর রেললাইনের নাটবল্টু খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা : কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রাম রাজারহাট উপজেলার কুড়িগ্রাম-রংপুর রেললাইনের ঠাঁটমারী বধ্যভূমি এলাকার রেলসেতুর লাইনের ১০টি হুক বোল্ট (নাট) চুরি করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার বিকালে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টার মো. শামসুজ্জোহা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় ও রেলসূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম-রংপুর রেললাইনের ঠাঁটমারী বধ্যভূমি এলাকায় অবস্থিত রেলসেতুর ওপরের স্লিপারের নাট কে বা কারা খুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দুপুরে রেল ওয়েম্যান কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টারকে খবর দিলে তারা উপস্থিত হয়ে রেললাইনের মেরামত কাজ শুরু করেন।
এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন মাস্টার মো. শামসুজ্জোহা বলেন, হারিয়ে যাওয়া নাটগুলোর স্থলে নতুন নাট বসানো হয়েছে। এখন রেল চলাচলে কোনো সমস্যা নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, নাট চুরির বিষয়টি নাশকতা সৃষ্টি নয়, নাটগুলো কেউ চুরি করে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে রেল বিভাগ কাজ করছে। আমরা নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেষ্ট আছি। আর এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।