নতুন করে সুপার লিগের ঝড়

সংগৃহীত ছবি

১৮ এপ্রিল ২০২১। হঠাৎ এক ঘোষণায় তোলপাড় শুরু হয় বিশ্বফুটবলে। ইউরোপের শীর্ষ ১২ ক্লাব একজোট হয়ে সুপার লিগ চালুর ঘোষণা দেয়। তাতেই তোলপাড় গোটা ফুটবলবিশ্ব।

তবে ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমর্থক, ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক চাপের মুখে এই লিগ থেকে নাম সরিয়ে নেয় ৯টি ক্লাব। নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস। যদিও গত জুলাইয়ে আসরটি থেকে নাম সরিয়ে নেয় জুভেন্টাস। তবে সুপার লিগ নিয়ে বিশ্বফুটবল ভাগ হয়েছে দুই ধারায়।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/12.December/26-12-2023/2/kalerkantho-sp-3a.jpg

কেউ বলছেন, সুপার লিগেই মিলবে ফুটবলের মুক্তি। আবার কেউ এই লিগকে স্বার্থপরতার চোখে দেখছেন।
সে সময় সুপার লিগ আলোর মুখ না দেখলেও ৩২ মাস পর আবারও আলোচনায় ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। এই আসরে অংশ নিলেই ফিফা ও উয়েফার নিষেধাজ্ঞায় পড়ার শঙ্কা ছিল।

তাই আগাম নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর ব্যবস্থা করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল লিগ কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার এসেছে আদালতের রায়। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনের ক্ষেত্রে ফিফা ও উয়েফার বাধা দেওয়াকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছেন আদালত। এর পরই সুপার লিগ চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে নতুন করে। ৬৪ দল নিয়ে এই লিগ আয়োজনের প্রস্তাব করেছে আয়োজকরা।

তিনটি স্তরে হবে লিগ। প্রতিটি স্তরের মধ্যে প্রমোশন ও রেলিগেশন থাকবে। আর শীর্ষ লিগের নাম দেওয়া হয়েছে স্টার লিগ, যেখানে দুই গ্রুপে ১৬টি দল খেলবে। দ্বিতীয় স্তরের গোল্ড লিগে একইভাবে দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলবে ১৬টি দল। তৃতীয় স্তরের ব্লু লিগে দল থাকবে ৩২টি। চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে ক্লাবগুলো। নতুন পরিকল্পনায়, সম্প্রচার করার জন্য একটি নতুন স্পোর্টস স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আমজনতার জন্য সুখবর―সুপার লিগের সব ম্যাচ দেখা যাবে বিনা মূল্যে। বিজ্ঞাপন, প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ও স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আয় হবে। রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ সুপার লিগেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি। এই লিগের পৃষ্ঠপোষক সংস্থা এ-টোয়েন্টিটু স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী বার্নড রেইচার্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরার পর বলেছেন, ‘ফুটবল এখন উয়েফার একাধিপত্য থেকে মুক্ত। এখন নিষেধাজ্ঞার ভয় না করে সেরা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে। এখানে দলগুলো অংশ নেবে মাঠের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। স্থায়ী কোনো সদস্য থাকবে না আর ক্লাবগুলো ঘরোয়া লিগেও খেলবে।’

তবে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ক্লাব এই লিগে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। বরং ইউরোপের অন্য শীর্ষ ক্লাবগুলো বিবৃতি দিয়ে সুপার লিগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ছয় ক্লাব; ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি, টটেনহামের সঙ্গে জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ, স্পেনের অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, ইতালির এসি মিলান, ইন্টার মিলানের সঙ্গে জুভেন্টাসও চ্যাম্পিয়নস লিগেই খেলতে চায়। আগের সিদ্ধান্তেই অটল আছে বলে বিবৃতি দিয়েছে এই ক্লাবগুলো।

এতেই বোঝা যাচ্ছে, ৬৪ দলের এই লিগ চালু করতে আয়োজকদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। যে কারণে সুপার লিগ নিয়ে কটাক্ষই করেছেন উয়েফার প্রধান আলেকজান্ডার শেফেরিন, ‘আমরা ওদের থামানোর চেষ্টা করব না। আশা করি, ওরা তাদের অসাধারণ প্রতিযোগিতা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করবে, দুটি ক্লাবকে নিয়ে। আশা করি, কী করছে সেটা তারা জানে। তবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। ফুটবল বিক্রির জন্য নয়।’ ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলছেন, ‘আদালতের রায়ে কোনো কিছুরই পরিবর্তন আসবে না।’

আদালতের রায়কে চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে দেখছেন না পিএসজি ও ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নাসের আল খেলাইফিও, ‘তারা রায়কে জয় হিসেবে দেখছে, আমি মোটেও সেভাবে দেখছি না। সুপার লিগের সঙ্গে রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ইউরোপে সব স্টেকহোল্ডার একই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ। এই রায় আমাদের আরো ভালো ও শক্তিশালী করবে।’ রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি অবশ্য আদালতের রায়কে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন, ‘আমি মনে করি, সব ক্লাবের জন্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় দিনশেষে এটা ইতিবাচক। কারণ এখানে কোনো একাধিপত্য থাকবে না।’

দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো চ্যাম্পিয়নস লিগকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল উয়েফাকে। মূলত তাদের দাবি ছিল বড় ক্লাবগুলো যেন লভ্যাংশ বেশি পায়। কারণ তারাই টিভি রাইটস ও মাঠের দর্শককে বেশি আকর্ষণ করে। কিন্তু উয়েফা সেসব দাবিতে কান না দেওয়ায় পরিকল্পনা হয়েছিল সুপার লিগ আয়োজনের। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া প্রতিটি ক্লাব অন্তত ৪০ কোটি ইউরো করে পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে এ-টোয়েন্টিটু স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, যা অংশগ্রহণ বাবদ উয়েফার দেওয়া অর্থের দ্বিগুণেরও বেশি। শেষ পর্যন্ত এই লিগ যদি মাঠে গড়ায় তাহলে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা ১০০ কোটি ইউরো (প্রায় ১২ হাজার ৮০ কোটি টাকা) করে আনুগত্য বোনাসও পেতে পারে। ‘বিদ্রোহী’ এই লিগে টাকার ঝনঝনানি থাকলেও এবারও আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে আছে ঘোর সংশয়।

LEAVE A REPLY