টেলরের গান বদলে দিয়েছে মাকে হত্যাকারী জিপসি ব্লানচার্ডের জীবন!

জিপসি রোজ ব্লানচার্ড ও টেলর সুইফট

২০১৫ সালে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে নিজের মাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া জিপসি রোজ ব্লানচার্ডকে মনে আছে? সেই বছর সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা ছিল এটি। সম্প্রতি প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন জিপসি। তাঁর সাজা এখনো বাকী আছে। তবে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা কাটিয়েছেন কারাগারে।

আর তাকে সেই কঠিন সময় পাড়ি দিতে সাহায্য করেছেন পপকুইন টেলর সুইফট! হ্যাঁ, টেলর সুইফটের গানই তাকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। প্যারোলে বের হয়ে এমনটাই জানালেন জিপসি রোজ ব্লানচার্ড।

জিপসি রোজ ব্লানচার্ড একজন সুইফটি (টেলর সুইফটের অনুরাগীদের সুইফটি বলা হয়)। জিপসি, যিনি ২০১৫ সালে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে নিজের মাকে হত্যা করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার একটি মার্কিন কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। মুক্তির পর জিপসি বলেছেন, টেলর সুইফটের গান তাকে তাঁর ‘স্বাধীনতা’ অর্জনের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করেছিল। টিএমজেডের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, জিপসি তাঁর বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে কারাগারে টেলরের অ্যালবামগুলি ক্রয় করে। টেলরের প্রতিটি অ্যালবাম ক্রয় করে তাঁর গান শুনেছেন জিপসি।

যা তাকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বাঁচার, মুক্তির।

1
জিপসি রোজ ব্লানচার্ড (সাম্প্রতিক সময়ের ছবি)

টিএমজেডের সঙ্গে কথোপকথনে জিপসে বলেছেন, সাত বছর কারাগারে থাকার সময় টেলর সুইফটের সংগীত তাকে তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত উপহার দিয়েছে যখন তিনি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মা ডি ডি’র হাতে তিনি যে দুর্ব্যবহার এবং ট্রমা সহ্য করেছিলেন এবং জেলের ভেতরে যে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছিল তাকে, সেই মুহূর্তে টেলরের গানগুলিই তাকে সাহায্য করেছে। 

জিপসি রোজ ব্লানচার্ড আশা করছেন রবিবারের কানসাস সিটি চিফস গেমে তিনি তাঁর আইডল টেলরের সাথে দেখা করতে পারবেন কারণ তার স্বামী রায়ান অ্যান্ডারসন ইতিমধ্যে টিকিট কিনেছেন। জিপসির ঘনিষ্ঠ সূত্র  টিএমজেডকে জানিয়েছে যে জিপসি টেলরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দৃষ্টি আকর্ষন করবেন, খেলা থাকাকালীন টেলর এটি দেখতে পাবেন এই প্রত্যাশায়।

জিপসির জীবন কাহিনী নিয়ে এর আগে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার টিভির পর্দায় আসতে চলেছে তাঁর গল্প। জিপসি এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে একটি নতুন ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মিত হচ্ছে। আসন্ন ডকু সিরিজ ‘দ্য প্রিজন কনফেশনস’-এ নিজের গল্প বলার জন্য প্রস্তুত জিপসি রোজ ব্লানচার্ড। ৩২ বছর বয়সী এই নারী ২০১৫ সালে তাঁর মা ক্লাউডিন ওরফে ডি ডিকে হত্যায় তৎকালীন প্রেমিক নিক গোডেজোনের সাথে ষড়যন্ত্র করার জন্য তাঁর প্রাপ্ত সাজার ৮৫ শতাংশ ইতোমধ্যে ভোগ করেছেন।

২০১৫ সালে তুমুল আলোচনায় উঠে আসা এই হত্যা মামলায় দণ্ড দেওয়ার সময় সরকারি উকিল ড্যান প্যাটারসন আসামির (জিপসি) প্রতি দয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানান। বিচারক জিপসিকে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার’-এর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন, যা পূর্বপরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে হত্যাকান্ড বোঝায়। যদিও ড্যান প্যাটারসনের কাছে তথ্যপ্রমাণ ছিল যে জিপসি আর তার বন্ধু ছক কষেই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারপরও এই কেসের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি ‘ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার’ বা ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ আনা থেকে বিরত থাকেন। এই দোষে দোষী হলে চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অন্তত কম করে হলেও প্যারোলের সুযোগ ছাড়া যাবজ্জীবন। তবে ড্যান প্যাটারসন সাংবাদিকদের জানান- তিনি মনে করেন না এই শাস্তি আসামীর প্রাপ্য।

কিন্তু কেন? নিজের মাকে চিন্তা-ভাবনা করে খুনের পরেও আসামির প্রতি সরকারি উকিল সহানুভূতি প্রকাশ করছেন! এমনকি সংবাদপত্র থেকে জনতা সবার সমর্থনই জিপসির দিকে। এমনকি জিপসির মায়ের পরিবারও জিপসির পক্ষে। তাঁর দাদা বলেছেন- তাঁর মেয়ে (জিপসির মা) উচিত শাস্তিই পেয়েছে। জিপসির বাবা রড আর সৎ মা ক্রিস্টিও সবসময় মেয়ের পাশেই আছেন। কিন্তু কেন জিপসির প্রতি এত সহানুভূতি? কারণ, জিপসির মা বিরল এক রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, যার নাম ‘মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’। এটি শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মিথ্যা লক্ষণ সৃষ্টি করার মতো এক ধরনের রোগ। যার ফলে প্রায়ই জিপসিকে নানাভাবে অত্যাচার করতো তাঁর মা। অবশেষে বন্ধুর সঙ্গে মিলে মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিপসি।

LEAVE A REPLY