বছরের শুরুতেই পরপর দুই বিপদে জাপান

নতুন বছরের প্রথম দিনই ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে জাপান। সোমবার দেশটির মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। শুধু একবার নয়। 

২৪ ঘণ্টায় পরপর ১৫৫ বার। ছোট ছোট এ ভূমিকম্পগুলোর বেশিরভাগই রিখটার স্কেলে ৩ দশমিকের বেশি মাত্রার ছিল। ভূমিকম্পের পাশাপাশি আঘাত হেনেছে সুনামিও। ভয়ে-আতঙ্কে প্রথমদিন পার করার পরপরই দ্বিতীয় দিনটাও গেল ভয়ংকর আরেক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। 

মঙ্গলবার আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, দেশটির রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে যাত্রী বহনকারী একটি বিমানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বছরের শুরুতেই পরপর দুই বিপদের কবলে জাপান। আলজাজিরা, এপি। 

জাপান টাইমস অনুসারে, ভূমিকম্প অন্তত ১০০টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুকে বিধ্বস্ত করেছে। 

মঙ্গলবার জাপানের আবহাওয়া অফিস দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৪৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামির ঢেউয়েও ক্ষতির মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ। 

কমপক্ষে ১.২ মিটার (চার ফুট) উচ্চতার ঢেউ ইশিকাওয়া প্রদেশের ওয়াজিমা বন্দরে আঘাত হেনেছে। পরে উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ হোক্কাইডোসহ অন্যত্র আরও কয়েকটি ছোট সুনামির খবর পাওয়া গেছে। যেখানে ডজনখানেক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। জরুরি কর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করার জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত একটি বড় অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত ছিল। দেশটির অগ্নি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা অনুসারে, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনাস্থল থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। 

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, প্রায় ১ হাজার আত্মরক্ষা বাহিনীর সদস্য উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় নিয়োজিত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইতালিসহ বেশকিছু দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।

বছরের দ্বিতীয় দিনেও ঘটে আরেক ভয়ানক দুর্ঘটনা। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) জাপান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী একটি বিমান অবতরণের সময় জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জাপান কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র ইয়োশিনোরি ইয়ানাগিশিমা সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, সংঘর্ষের পরপরই জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটিতে আগুন ধরে। এ সময় বিমানের জানালা দিয়ে আগুনের শিখা বের হতে থাকে। বিমানবন্দরের আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। 

দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাপান এয়ারলাইন্সের ওই বিমানে তিন শতাধিক যাত্রী ছিলেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাপানের উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছে, তাদের বিমানের পাইলট পালিয়ে গেছে। 

এনএইচকে জানিয়েছে, জাপানের উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন ক্রু সদস্যকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। 

জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানের ১৭ বছর বয়সি সুইডিশ অ্যান্টন ডেইবে, সুইডিশ সংবাদপত্র আফটনব্লাডেটকে বলেছেন, অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই পুরো কেবিন ধোঁয়ায় ভরে যায়। তারপরে জরুরি দরজা খোলা হয়েছিল। যেটা দিয়ে আমরা মাঠের মধ্যে দৌড়ে বের হই। 

LEAVE A REPLY