উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে আজ

সংগৃহীত ছবি

হিমালয়ের কোল ঘেঁষে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস সারা দেশে শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় গতকাল মঙ্গলবার উত্তরের জেলা নীলফামারীতে ছিল শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি।

ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ বুধবার দেশের উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

তবে এর স্থায়িত্ব দু-এক দিনের বেশি হবে না। 

আগামীকাল বা তার পরদিন থেকে তাপমাত্রা আবার ধীরে ধীরে বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ৪ ডিসেম্বরের (বৃহস্পতিবার) পর থেকে তাপমাত্রা আবার ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রবণতা থাকতে পারে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রা কমে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বুধবারও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে এই ঘন কুয়াশা। এতে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে।

সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে প্রায় অপরিবর্তিত। ঘন কুয়াশার কারণে সারা দেশে দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। 

আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, আগের দিনের তুলনায় গতকাল সারা দেশে তাপমাত্রা কমেছে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় নীলফামারীর সৈয়দপুরে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় কমেছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

উড়োজাহাজ চলাচল ব্যাহত
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে উত্তরের জেলা নীলফামারী। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস। বাড়ছে শীত ও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ব্যাহত হয়েছে ফ্লাইট ওঠানামা। আজ শীতের তীব্রতা আরো বাড়ার আভাস দিয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়। 

হাড়কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছে জেলার নিম্ন আয় ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটা জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় তাদের। ঘন কুয়াশায় কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল করেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।

দুপুর ১২টার দিকে জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের বৈরাগীপাড়া গ্রামের ধীরেন চন্দ্র রায় (৫০) বলেন, ‘আগুন পোহে (তাপি) হামরা দিন পার করেছি, কাম কাজোত যাবার পারেছি না। এমন করি হামার সংসারোত ঘাটতি পড়েছে।’

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম বলেন, এ সময় পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় তিন কিলোমিটার। পশ্চিমা বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। বুধবার তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হুদা জানান, চলতি শীত মৌসুমে সকাল থেকে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে বহির্বিভাগে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় দেখা গেছে।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, জেলার ছয় উপজেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরো বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হবে।
ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করেনি। ফলে এ সময় বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি বিমান সংস্থার নির্ধারিত ফ্লাইটের ঢাকাগামী যাত্রীরা সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আটকা পড়ে। তবে আড়াইটার পর ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়। 

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৯টা পর্যন্ত এই অঞ্চলে দৃষ্টিসীমা ৫০ মিটারের কম ছিল। বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামার জন্য দৃষ্টিসীমা দুই হাজার মিটার প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY