হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির লোগো।
রাজনৈতিক বিরোধে গত বছর দেশে ৯৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই সময়ে মোট ৯৯৩টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় ৯ হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত মাসে ১৩৮টি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়।
আহত হয়েছে ৬৫৯ জন।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরজুড়ে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের তথ্য ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এইচআরএসএস এই প্রতিবেদন তৈরি করে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে ১৩৮টি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে ১০ জন নিহত হয়। আহত হয় ৬৫৯ জন। এর বেশির ভাগই ঘটেছে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় গত বছর অনেক প্রাণহানির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত চলছে।
তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক নৈরাজ্য এবং সংঘাত দেখা গেছে। এসব সংঘাত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হয়। এ ছাড়া দলীয় কোন্দলের জেরে কিছু সংঘর্ষ হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এতে খুনখারাবি বাড়ে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হয়। এ সময় আমিরুল ইসলাম নামের একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুক মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়।
আসক ও এমএসএফের প্রতিবেদন
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১০২টি। এতে নিহত হয়েছে ছয়জন এবং আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার ৩৭৪ জন। সহিংসতাগুলোর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক প্রতিবেদন বলা হয়, এপ্রিল মাসে বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতার ৪০টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছে ৪৬৯ জন। নির্বাচনী, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা-সমাবেশে বাধার ঘটনায় মোট ৪৬১ জন আহত ও আটজন নিহত হয়েছে।
দুটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে আলাদা দুটি মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। দুটি সংস্থার পর্যবেক্ষণেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা রকম উদ্বেগ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে আসক বলছে, ২০২৩ সালে দেশে বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় বেশি। তাদের সুপারিশ হলো, নির্বাচনী সহিংসতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।