ফিলিস্তিনবিদ্বেষী বিচারককে আইসিজেতে পাঠাচ্ছে ইসরাইল

অসুরের হাতে সুবিচারের ত্রিশূল! ফিলিস্তিনবিদ্বেষী কুখ্যাত এক বিচারককে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) গাজা হত্যাযজ্ঞের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিচারক নিয়োগ দিয়োগ দিয়েছে ইসরাইল। আর কোনো অজর-আপত্তি ছাড়াই বিনা বাক্যে ইসরাইলের সে কট্টর বিচারককে এজলাসে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে আইসিজেও।

অবরুদ্ধ গাজার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরাইলের নৃশংসতাকে  যুদ্ধাপরাধ উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক আদালতে সুবিচার চেয়ে মামলা (২৯ ডিসেম্বর) করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্ব মানবাধিকার ও যুদ্ধনীতি লঙ্ঘনের এ মামলা টক্করে বেছে বেছে উগ্রপন্থি বিচারককে নির্বাচিত করায় প্রহসন সৃষ্টি হয়েছে পুরো মুসলিম বিশ্বে।

গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র হিসাবে শক্ত ভূমিকা নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৯ ডিসেম্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে। আগামী ১১-১২ জানুয়ারির মধ্যে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আইসিজে আদালতে এ মামলার প্রথম শুনানি হবে। সেখানেই বিচারকের আসনে থাকবেন গাজা হমলার সবচেয়ে বড় সমর্থক আহারন বারাক (৮৭)!

আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) ১৫ জন বিচারক নিয়ে গঠিত। এ মামলায় প্রতিপক্ষ থেকে একজন করে অতিরিক্ত সদস্য বিচারকের আসনে বসবেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইসরাইলকে প্রতিনিধিত্ব করবেন বারাক। 

তিনি দেশটির সুপ্রিমকোর্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট (সাবেক প্রধান বিচারপতি)।  দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বিশ্বদরবারে তিনি ইসরাইলের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে আসছে। এমনকি গাজায় ইসরাইলের আক্রমণকেও তিনি সমর্থন দিয়ে আসছেন। ইসরাইল সেনাদের হামলাকেও মানবিকতার লঙ্ঘন নয় বলে দাবি করেন তিনি। 

তার মতে, ফিলিস্তিনি সৈন্যদের হত্যার স্বার্থে বেসামরিক এমনকি শিশুরা যদি নিহত হয়- তা হতেই পারে। ২০০৬ সালের সুপ্রিমকোর্টের রায়ে তিনি নিজেই এটি অনুমোদন করেছিলেন। 

কানাডিয়ান নিউজ আউটলেট দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইলের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি করা হয়েছে। একটি সাক্ষাৎকারে বারাক বলেছিলেন, ‘তাদের নেতাকে টার্গেট করার জন্য পাঁচটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা সমানুপাতিক হতে পারে।’ 

টাইমস অব ইসরাইলের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ মামলায় চারজন আইনজীবী ইসরাইলকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ আইনজীবী ম্যালকম শ-এর নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। মার্কিন আইনজীবী অ্যালান ডারশোভিৎসকে শুনানিতে ইসরাইলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু অন্য একটি মামলায় বিতর্কিত থাকার কারণে তিনি এখনো চূড়ান্ত নন। 

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকেও চারজন আইনজীবীকে নিশ্চিত করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে বিচারপতি হিসাবে দেশটিকে প্রতিনিধিত্ব করবেন সাবেক উপ-প্রধান বিচারপতি ডিকগাং মোসেনেকে। 

গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবার) দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজেকে জানিয়েছিল ইসরাইল ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এমন পদক্ষেপে বলিভিয়া, মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো সমর্থন জানিয়েছে। 

এর আগে গত বছরের ১৭ নভেম্বর বলিভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, কমোরোস এবং জিবুতি ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি তদন্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)  অনুরোধ করে। 

অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগের নিন্দা করছে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার চেয়ে ‘নৃশংস এবং অযৌক্তিক আর কিছু নেই’।

LEAVE A REPLY