আমনেও স্বস্তি নেই চালের বাজারে

দেশে মজুত পর্যাপ্ত, বাজারে সরবরাহেও ঘাটতি নেই। এরপরও মিলাররা চাল নিয়ে কারসাজি করছেন।

বাড়তি মুনাফা করতে তিন মাস ধরে ধাপে ধাপে বাড়িয়েছেন দাম। তবুও প্রায় নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ। ফলে সবাই তাকিয়ে ছিল আমনের দিকে। ধারণা ছিল-আমন ধানের চাল বাজারে এলেই দাম কমবে।

কিন্তু আমন ওঠার পরও দাম কমেনি। বরং মিল পর্যায় থেকে সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ৩০০ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে হুহু করে বেড়েছে দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এতে ক্রেতা প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৫ টাকা বাড়তি দরে কিনছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, (৯ জানুয়ারি) দেশে মোট ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬২ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ৫ হাজার ১ টন, গম ১ লাখ ৮০ হাজার ২২৬ টন এবং ধান ১৫ হাজার ৮৫১ টন। মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে খাদ্যশস্যের মজুত পর্যাপ্ত ।

অন্যদিকে আমন মৌসুমে দেশে মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।

এতে ধান উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। ফলে আশানুরূপ ধান উৎপাদন হয়েছে। এ ধানের চাল বাজারে আসতেও শুরু করেছে।

শনিবার নওগাঁ ও দিনাজপুর মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বস্তা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা, যা আগে ২ হাজার ২০০ টাকা ছিল। আর প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা, যা আগে ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ধান কাটার মৌসুম এলেই তারা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ান। এবারও সেটাই হয়েছে।

এবার আমন ধানের চাল বাজারে এসেছে, এরপরও দাম কমছে না। তাই মূল্য কারসাজিতে জড়িতদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।

এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি জানান, বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। পাশাপাশি বিআর-২৮ জাতের চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকা, যা আগে ২২০০-২৩০০ টাকা ছিল। আর মিনিকেট চালের বস্তা ৩১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ২৯০০- ৩০০০ টাকা।

তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চালের সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার চেয়ে কম। একধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এখনই যদি নজরদারি না করা হয়, তাহলে অন্যান্য পণ্যের মতো চালের বাড়তি দামে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।

অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, আমন ফসল কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে মোটা চাল তৈরিত ব্যাঘাত হচ্ছে। সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম ততটা বাড়েনি।

এছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে সহায়তা করছে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিলাররা চাল নিয়ে আবারও কারসাজি করছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রির কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে।

বিক্রেতারা জানান, দেড় মাস আগে দাম কিছুটা বাড়ালেও মাঝে কমছিল। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে দাম আবারও বাড়ানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন-এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ২-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা, যা সাতদিন আগেও ৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, যা সাতদিন আগেও ৬৫ টাকা ছিল। পাইজাম ও বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা, যা আগে ছিল ৫৫ টাকা।

নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা মো. নিজামুল হক বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। একেক সময় বিক্রেতারা একেক পণ্যে দাম বাড়াচ্ছে। এখন আবার চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, চালের দাম কেন বেড়েছে, তা তদারকি করে বের করা হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তিন স্তরে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

LEAVE A REPLY