ইরান-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলা: যুক্তরাষ্ট্র ভারত চীনের তিন মত

ছবি: সংগৃহীত

চলতি সপ্তাহেই ইরান ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনা গাজায় হামাস-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে তেহরান সম-্থিত স্খতি বিদ্রোহীদের হামলায় এরই মধ্যে সহিংসতা ও রক্তপাত জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ও সশস্ত্র সংঘাত বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পাকিস্তানের গতকাল বৃহস্পতিবার চালানো হামলায় চার শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানে ইরানের চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শিশু।

দুই পক্ষই অবশ্য ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করেছে। জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল আদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান। আর ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নামে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’কে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে তারা। পাকিস্তান ছাড়াও সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইমেয়েনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর চতুর্থ দফায় হামলা চালিয়েছে। পেন্টাগন কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ ধ্বংস করা হয়েছে। চীন ও ভারতও ইরানের হামলা নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।

বেইজিং দুই পক্ষকেই ‘সংযম’ প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছে। নয়াদিল্লি অবশ্য ‘ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যকার’ বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ‘বুঝতে পারছে আত্মরক্ষার্থেই দেশ দুটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।’

যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘনের জন্য ইরানের সমালোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিও মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি বিষয় কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক…একদিকে ইরান এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের শীর্ষস্থানীয় অর্থদাতা এবং অন্যদিকে তাদের (ইরান দাবি করে) সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় এই পদক্ষেপগুলোও নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

অবশ্য বেইজিং আরো নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, এমন পদক্ষেপ এড়ানো এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।’ বেইজিং দুই দেশকেই ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ হিসেবে দেখে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ইরান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল আমদানি করার কারণে চীন সম্ভবত এই বিষয়ে কিছুটা নাজুক অবস্থানেই রয়েছে।

অন্যদিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের বিষয়টিই পুনর্ব্যক্ত করেছে নয়াদিল্লি। তবে ভারত বুঝতে পেরেছে দেশগুলো নিজেদের আত্মরক্ষার্থেই এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা ইরান ও পাকিস্তানের বিষয়। তবে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটুট আছে। আমরা বুঝতে পারছি, আত্মরক্ষার্থে এমনটা করা হয়েছে।”

ইরানে হামলার পর পাকিস্তান দাবি করেছে, ‘বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে যাচ্ছে এমন বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের’ ভিত্তিতেই তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে দেশটি। ওই হামলার জেরে গত বুধবার ইসলামাবাদ পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে তেহরান থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করেছে ইসলামাবাদ।

সূত্র : বিবিসি

LEAVE A REPLY