কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে স্থাপিত অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে কয়েকটি স্থাপনা ও মৎস্য খামারের সীমানা বেড়া উচ্ছেদ করা হলেও বেশিরভাগ স্থাপনা এখনো রয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ-কয়েকটি বসতি উচ্ছেদ করে প্রশাসন দায় সারছে। বালিয়াড়িতে ছোট-বড় স্থাপনার পাশাপাশি পেয়ারা বাগান ও ইউক্যালিপটাস বাগান হয়েছে।

শহরের উপকণ্ঠ সমিতিপাড়া এলাকার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে অবৈধ শত শত বসতি গড়ে তোলা হয়। ১৮ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে ‘সমুদ্রসৈকত দখল করে প্লট বাণিজ্য’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন ও বন বিভাগের ঘুম ভাঙে। বুধবার সকালে কক্সবাজারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সৈকতের বালিয়াড়িজুড়ে অসংখ্য স্থাপনার মধ্যে কয়েকটি স্থাপনা ভাঙা হয়। এছাড়া কয়েকটি মৎস্য প্রজেক্টের সীমানা বেড়া ভাঙা হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ জানান, খাস জায়গার এসব স্থাপনা ধীরে ধীরে উচ্ছেদ করা হবে। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ-উচ্ছেদ অভিযানে তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। প্রশাসনের লোকজন দেখে-দেখে স্থাপনা ভেঙেছেন। অবৈধ বেশিরভাগ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলেও স্কুল ও খেলার মাঠের দুটি ভিত্তিপ্রস্তরযুক্ত নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে।

পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমুদ্রসৈকতের ঝাউবন কেটে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কয়েকশ প্লট বানানো হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে প্রতিটি প্লট ভূমিহীন, রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এরইমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানের ঝাউবন ধ্বংস করে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এমনকি সমুদ্রসৈকতের কয়েকটি এলাকার নামকরণ করেছেন প্রভাবশালীরা নিজেদের নামে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে ভূমি অফিস ও বন বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের ম্যানেজ করে সমুদ্রসৈকত দখল করে গ্রাম বানাচ্ছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। প্রকাশ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সমুদ্রসৈকত দখল করে বিক্রি করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হলেও জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ঝড়ের গতি রোধে সমুদ্রসৈকতের ঝাউ গাছ অস্বাভাবিক ক্ষমতা রাখে। জলোচ্ছ্বাসের সময় এ গাছ মানুষের আশ্রয় হিসাবেও কাজ করতে পারে। এজন্য ঝাউ গাছ না কেটে বরং ঝাউ বাগান সৃজন করতে হবে। অভিযোগ-কক্সবাজার পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে ভূমিদস্যু চক্র গড়ে উঠেছে। একজন প্রভাবশালী সচিবসহ কয়েকজন আইনজীবীরও নামও শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝাউবন কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ঝাউবন রক্ষায় বনবিভাগ ৩০ জনের কমিটি করেছিল। অভিযোগ-এ কমিটির বেশিরভাগ সদস্য ঝাউবন নিজের সম্পত্তি মনে করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, সমুদ্রসৈকতের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঝাউবন কাটা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। নির্বিচারে ঝাউবন কাটায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ঝাউবন রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আকতার কামালের কাছে সুমদ্র দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) সারওয়ার আলম বলেন, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার প্রশাসনের সমন্বয়ে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, অভিযোগ জানতে পেরে অভিযান শুরু করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY