হাত হারানো শিশুকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাইকোর্টের

ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার সময় ডান হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের মধ্যে নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হোসেনকে দুই কিস্তিতে এ টাকা দিতে বলা হয়। আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। 

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক ও মো. বাকির উদ্দিন ভূইয়া।

সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম ও আইনজীবী আবদুল বারেক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

আইনজীবী অনীক আর হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখায় শিশুটির নামে ১০ বছর মেয়াদি ১৫ লাখ টাকার একটি এফডিআর করে দিতে হবে।

দ্বিতীয় কিস্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি ১৫ লাখ টাকার  আরো একটি এফডিআর করে দিতে হবে। ১০ বছর পর মুনাফাসহ দুটি এফডিআরের মোট অর্থের মালিক হবে নাঈম হাসান নাহিদ। এই এফডিআর তার মা-বাবা কেউ ভাঙতে পারবে না। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা খরচ হিসেবে প্রতি মাসে শিশু নাঈম হাসান নাহিদের ব্যাংক হিসাবে সাত হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুবকে।

’ 

প্রতি তিন মাস পর পর আদালত বিবাদীপক্ষকে রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলে হাইকোর্ট রায়ের কার্যকারিতা চলমান (কন্টিনিউয়াস মেন্ডামাস) রেখেছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। কালের কণ্ঠকে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘জবরদস্তিমূলক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগিয়ে আহত করার অভিযোগে ভৈরব থানায় শিশুটির চাচা যে মামলা করেছিলেন, তা বাদীপক্ষকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন আদালত।’ 

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি না জানতে ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুবের আইনজীবী কামরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।  

রায় ঘোষণা শেষে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নাইমা হায়দার শিশুটিকে কাছে ডেকে নিয়ে তার হাতে চকোলেট তুলে দেন। বিচারপতি আদর করে বলেন, ‘আর দুষ্টুমি করবে না।

ভালোভাবে পড়ালেখা করবে। আমরা কিন্তু তোমার পড়াশোনার খোঁজ নেব। যখন বুড়ো হব, বড় অফিসার হয়ে দেখা করতে আসবে। ভালো থেকো।’

‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে  ২০২০ সালের ১ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্কশপে কাজ নেওয়ার সময় শিশু নাহিদের বয়স ছিল ১০ বছর। তখন সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা আনোয়ার হোসেন জুতার ব্যবসা করতেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। এই ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়েই তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি।

এ প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ২০২০ সালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন শিশুটির বাবা আনোয়ার। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা দিয়ে অনুসন্ধান করাতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এদিকে ওই ঘটনায় শিশুটির চাচা শাহ পরান বাদী হয়ে জবরদস্তিমূলক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লাগিয়ে আহত করার অভিযোগে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর ভৈরব থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় ওয়ার্কশপের মালিক ইয়াকুব হোসেন, ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি স্বপন মিয়া, জুম্মান মিয়া, সোহাগ মিয়া ও ব্যবস্থাপক রাজু মিয়াকে। এই মামলায় ২০২১ সালের ৩০ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। 

LEAVE A REPLY