মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ না হতেই বাড়ছে দাম। রাজধানীর বাজারে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজির দাম বেড়ে শতক ছাড়িয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এদিন খুচরায় কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ক্রেতাদের উচ্চ দামে রসুন কিনে খেতে হয়েছে।
তবে এখন বাজারে নতুন রসুন চলে আসায় দাম অনেকটাই কমে গেছে। ক্রেতারা এখন নতুন দেশি রসুন কেজি মানভেদে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনতে পারছে। আর কেজিতে আলুর দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
দেড়-দুই মাস আগে বাজারে আসতে শুরু করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
এই পেঁয়াজের বেশির ভাগই এরই মধ্যে মাঠ থেকে তোলা হয়ে গেছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে আগামী মাসেই হালি জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ শুরু হবে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় কৃষক পর্যায়েই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। আগামী মাসে কৃষকরা হালি পেঁয়াজ তোলা শুরু করবেন। তখন আবার দাম কমবে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণত পেঁয়াজের মৌসুমে দাম অনেকটাই ক্রেতার নাগালের মধ্যেই থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি উল্টো।
ভরা মৌসুমেও চড়া দামের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষরা হিমশিম খাচ্ছে পেঁয়াজ কিনতে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ মানভেদে কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে। দেশি নতুন রসুন কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও পুরাতন দেশি রসুন কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা এবং আমদানীকৃত রসুন কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও বাজারে ক্রেতারা ২৫০ টাকার নিচে রসুন কিনতে পারেননি। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে আমদানি শুরু হয়েছে। ফলে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমেছে। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি। ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি কেজি ১৪৮ টাকা এবং খোলা চিনি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আড়তদার জালাল উদ্দিন খান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বুধবার রাতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাইকারিতে ৯৩ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। দাম বাড়ার কারণে বৃহস্পতিবার দিনের বেলা পাইকারিতে কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম। কৃষকের হাতেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। যার কারণে তাঁরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এক মাসের মধ্যেই হালি পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। তখন দাম কমে যাবে।’
জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেশি বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১০০ টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে নতুন রসুন আসার কারণে দাম কমেছে। এখন নতুন রসুন কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি। ফার্মের ডিম ডজন আগের দামেই ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের বাজারদরের প্রতিবেদনেও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১১০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা আলু বিক্রেতারা বলছেন, গত শনিবার থেকে আলু আমদানি শুরু হওয়ায় বাজারে কেজিতে আলুর দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু মানভেদে ২০ থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারদরের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুরগির বাজার গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরিবর্তন নেই। আগের দামেই অর্থাৎ ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’