সংগৃহীত ছবি
হৃদরোগ বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও ঘাতক ব্যাধিগুলোর একটি। সাধারণত ৪৫ বছরের বেশি বয়সের পুরুষ ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নারীদের ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা যায়। কিন্তু ইদানীং তরুণ বয়সেই এ রোগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কারণ
বাংলাদেশে এই হার বৃদ্ধির প্রধান যেসব কারণ দেখা যায় তার মধ্যে কিছু পরিবর্তনযোগ্য, কিছু অপরিবর্তনীয়।
অপরিবর্তনীয় কারণ : অপরিবর্তনীয় কারণগুলো হলো আমাদের জাতিগত ও জিনগত বৈশিষ্ট্য। জাতিগতভাবে দক্ষিণ এশীয়দের অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এবং জটিলতা তৈরি হওয়ার প্রবণতা অধিক। এ ছাড়া কারো নিকট আত্মীয়দের মধ্যে হৃদরোগী থাকলে তাঁর হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
পরিবর্তনযোগ্য কারণ : পরিবর্তনযোগ্য যেসব কারণে হৃদরোগ হয়ে থাকে সেগুলো হলো, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মানসিক চাপ ও ঘুমের স্বল্পতা, ওজন বেশি হওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও মাদক গ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব, পরিবেশদূষণ, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি।
► আমাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, অধিক পরিমাণে ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিংকস গ্রহণ, লবণ বেশি খাওয়া, ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন, ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া এবং একই সঙ্গে কায়িক শ্রম, খেলাধুলা কমিয়ে দেওয়ার কারণে তরুণদের মধ্যে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে।
► তরুণ সমাজের মধ্যে বিশ্বায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে লাইফস্টাইলসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হচ্ছে, যা তাদের মধ্যে মানসিক চাপ, মোবাইল আসক্তি এবং রাত জাগার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে।
► ধূমপান এবং মাদকাসক্তির প্রবণতা বৃদ্ধি করছে। খাদ্যে ভেজালও আমাদের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী।
এ ছাড়া কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন ব্যক্তিদের রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
প্রয়োজন সচেতনতা
বাঁচতে হলে জানতে হবে এবং মানতে হবে। আমাদের শৈশবকাল হতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ গড়ে তুলতে হবে। ধূমপান ও মাদক প্রতিরোধে হতে হবে কঠোর।
একই সঙ্গে তরুণ বয়সে বুকে ব্যথাসহ হৃদরোগের উপসর্গকে অবহেলা করা যাবে না। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণসহ করতে হবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিশেষত যাঁদের বাবা বা মায়ের বংশে হৃদরোগী আছেন। সমন্বিত সচেতন প্রয়াসই আমাদের পারে এই মারণব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
পরামর্শ দিয়েছেন
অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বাবু
কার্ডিওলজি বিভাগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা।