ফ্যান বন্ধ করলে বা বদ্ধ ঘরে থাকলে মাথা ঝিমঝিম করা শুরু করে। কানে এক প্রকার শব্দ হয়, যেন ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। কোনো বাহ্যিক শব্দ ছাড়া কানের ভেতর এ রকম বেজে যাওয়াকে টিনিটাস বলে। লাতিন শব্দ ‘টিনিয়ার’ থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ ঘণ্টার শব্দ।
প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১-২ শতাংশ মানুষ এটির কারণে দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। এটি এক কানে অথবা উভয় কানে হতে পারে। পুরুষের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব মানুষের।
কারণ
► শ্রবণশক্তি হারানো।
► গাড়ির উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন, জেনারেটর ও শিল্প-কারখানার ভারী যন্ত্রাংশের শব্দ, লাইভ কনসার্ট, যত্রতত্র মাইকের ব্যবহার, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন ইত্যাদি কারণে অন্তঃকর্ণের ক্ষতি হয়।
► মধ্যকর্ণে পানি বা ফ্লুইড জমা হলে।
► অন্তঃকর্ণে অস্বাভাবিক তরলীয় চাপ বা মিনিয়ারস ডিজিজ।
► মাথায়, কানে ও ঘাড়ে আঘাত।
► কানের সামনে মাথার দুই পাশে চোয়ালের জয়েন্টের ব্যাধি।
► মাথা ও ঘাড়ে টিউমার।
► বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ইত্যাদি।
► এ ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, স্থূলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও টিনিটাস বেশি দেখা দেয়।
চিকিৎসা
টিনিটাস যেহেতু বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তাই এর জন্য নির্দিষ্ট একক কোনো চিকিৎসা নেই। যদি টিনিটাসের নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়, তবে তা চিকিৎসার ফলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে সঠিকভাবে নিচের ছক অনুযায়ী অগ্রসর হলে অনেকেই এ উপসর্গ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারেন।
► প্রতিরোধ : যেসব কারণে এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে (যেমন—শব্দদূষণ, কানের ক্ষতিকারক অসুখ, ধূমপান, মদ্যপান, অত্যধিক দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ইত্যাদি) সেগুলো থেকে সাবধানে থাকা।
► রোগের চিকিৎসা : যেসব রোগের কারণে টিনিটাসের উৎপত্তি হয়, সেগুলোর চিকিৎসা করা, যেমন—কানের ওয়াক্স, ইনফেকশন, পানি জমা, টনসিল, এডিনয়েডের চিকিৎসা, মিনিয়ারস ডিজিজ ইত্যাদি।
► অপারেশন : মাইক্রোস্কোপ বা অ্যান্ডোস্কোপের সাহায্যে কানের পর্দা লাগানো, স্প্যাপিস সার্জারি, ককলিয়ার ইমপ্লান্ট, কানের টিউমার ইত্যাদি চিকিৎসা ও অপারেশনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
► টিনিটাস মাসকার বা হিয়ারিং এইড ব্যবহার। এর সাহায্যে সম্পূর্ণ বা আংশিক মাসকিং করা যায়।
► শব্দথেরাপি বা পিচমেচিং : টিনিটাসের ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে ম্যাচ করে এরূপ কোনো শব্দতরঙ্গ বা সুর টিনিটরের মাধ্যমে কানে দেওয়া হয়, যাতে টিনিটাসের শব্দ কানে অনুভূত না হয়। বারবার এটি দেওয়া হলে একসময় রোগীর কানের ভেতর টিনিটাসের শব্দ অভিযোজিত হয়ে যায়। এ ছাড়া রুমে হালকা মিউজিক, টিকটিক ঘড়ির শব্দ, রেডিও, একটু বেশি শব্দ হয় এমন কোনো ফ্যান চালানো যেতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. আলমগীর মো. সোয়েব
সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি)
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল
