পাকিস্তানে নির্বাচন : কোন পথে যাবে পিটিআই

সংগৃহীত ছবি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সব পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।

এদিকে ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজয়ী ভাষণে জোট সরকার গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফ। তবে পিটিআই সমর্থিত বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পরবর্তী পরিকল্পনা জানা যায়নি।

২৬৪টি আসনের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত ২৫৩টি আসনের ফলাফল অনুযায়ী, ৯২টি আসনে এগিয়ে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ৭১টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪ আসন নিয়ে তৃতীয়।

নির্বাচনে সাফল্য সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রতীক ‘ব্যাট’ না পাওয়া এবং একের পর এক মামলায় দলের শীর্ষ নেতা ইমরান খান কারাবন্দি থাকায় খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই পিটিআই। এর অর্থ, পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীর সর্বোচ্চসংখ্যক আসনে জিতলেও সম্ভবত সরকার গঠন করতে পারবেন না।

কারণ সংখ্যালঘুদের জন্য নির্ধারিত আসনে তাঁদের জন্য কোটা বরাদ্দ থাকবে না। তাহলে পিটিআইয়ের সামনে এখন কোন পথ খোলা?

এত স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনো নির্বাচিত হয়েছিলেন?

সাংবাদিক ওয়াসাতুল্লাহ খান বলেন, জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে এবারের চেয়ে অনেক বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় পুরো পার্লামেন্ট ছিল স্বতন্ত্রদের দখলে। ১৯৮৫ সালে নির্দলীয় নির্বাচন হয়েছিল।

কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি এবং সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। অবশ্য প্রত্যেকের প্রতিই কারো না কারো সমর্থন ছিল, তবে কাগজে-কলমে তাঁরা সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র।

তিনি আরো জানান, নির্বাচিত প্রার্থীরা পার্লামেন্টে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের নাম দেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ। আর এখান থেকে পিএমএল-এন ও পিএমএল-কিউয়ের সৃষ্টি।

ইমরানপন্থীরা জাতীয় পরিষদে না এলে কী হবে?

ওয়াসাতুল্লাহ খান বলেন, এটি দলের জন্য ভালো হবে না।

তারা আগেও এমনটা করেছে এবং তাদের পরিণতি সবাই দেখেছে। গতবার যে পরিস্থিতিতে তারা পড়েছিল, আমার মনে হয় না তারা আবার একই কাজ করবে। তবে তারা একটি দল গঠনের চেষ্টা করতে পারে এবং নাম দিতে পারে ইনসাফ গ্রুপ অথবা অন্য কিছু।

স্বতন্ত্ররা নিজেদের পিটিআই সদস্য দাবি করতে পারবেন?

আইনজীবী আবদুল ময়েজ জাফরি বলেন, নির্বাচন কমিশন পিটিআইকে প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করেছে, তবে দলকে তালিকা থেকে বাদ দেয়নি। আইনিভাবে এখনো বৈধ রাজনৈতিক দল পিটিআই।

পিটিআই সমর্থিত প্রার্থী সালমান আকরাম রাজার প্রসঙ্গ টেনে এই আইনজীবী বলেন, স্বতন্ত্র নয়, বরং পিটিআই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সালমান। পিটিশনে সালমানের যুক্তি ছিল, পিটিআইকে প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি না দিলেও একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এর অস্তিত্ব ও কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি।

স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিতে পারবে পিএমএল-এন?

সাংবাদিক জারার খুহরো বলেন, ‘অনেকেই তাঁদের সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী। সব স্বতন্ত্র প্রার্থী কী করবেন, তা নিয়ে ঢালাওভাবে কথা বলতে দ্বিধা হচ্ছে আমার।’

তিনি বলেন, তবে এটি অঞ্চলভেদে ভিন্ন হবে। খাইবারপাখতুনখোয়ায় পিটিআই ছেড়ে যাওয়া নেতাদের গ্রহণ করবে না জনগণ। দক্ষিণ পাঞ্জাবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। সেখানে পিএমএল-এন কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকে দলে ভেড়াতে পারে। সাময়িক হয়রানির শিকার হওয়া লাগতে পারে, এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে অনেকে বিজয়ীদের দলে যোগ না-ও দিতে পারেন।

স্বতন্ত্ররা প্রধানমন্ত্রী বাছাই করতে পারবেন?

সাংবাদিক শাহজেব জিলানির মতে, নির্বাচিত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে কোনো দলকে সমর্থন করবেন, না ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো দলে যোগ দেবেন, তা নির্ধারণে তিন দিন সময় পাবেন।

তিনি বলেন, যদি পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে চান, তাহলে তাঁদের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে। মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিন (এমডাব্লিউএম) নামের একটি দলের কথা শোনা যাচ্ছে, যা এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।

তিনি বলেন, এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে দুটি দল জোট বেঁধেছিল। স্বতন্ত্ররা যদি ওই দলে যোগ দেন, তাহলে তাঁরা সংরক্ষিত আসন পাবেন। এতে পার্লামেন্টে তাঁদের সংখ্যা বাড়বে এবং পার্লামেন্টের নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।

স্বতন্ত্ররা বিরোধী নেতা নির্বাচিত করতে পারবেন?

শাহজিব জিলানির ভাষ্য, এ জন্য পিটিআই সমর্থিতদের রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে। তাঁরা যদি বিদ্যমান দলগুলোর একটিতে যোগ দেন এবং সংখ্যায় বেশি থাকেন, তাহলে অবশ্যই পার্লামেন্টের নেতা নির্বাচিত করতে চাইবেন। আর যদি না পারেন, তাহলে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের সুযোগ থাকবে তাঁদের সামনে।

সূত্র : দ্য ডন

LEAVE A REPLY