অর্ধশতাধিক নির্দেশক সঠিক পথে নেই

পাঁচ বছর মেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা (অষ্টম পঞ্চবার্ষিক) বাস্তবায়নে দেশ পিছিয়ে আছে। প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অর্ধশতাধিক নির্দেশক (বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিমাপক) বাস্তবায়নের সঠিক পথে নেই। এর মধ্যে শভভাগ অফট্র্যাকে (বাস্তবায়ন সঠিক পথে নেই) ৩৯টি এবং আংশিক অফট্র্যাকে ৫টি নির্দেশক। তবে মূল্যায়নের জন্য হালনাগাদ তথ্যই নেই ২৫টির। এছাড়া সঠিক পথে বা অনট্র্যাকে (বাস্তবায়ন সঠিক পথে আছে) ৩২টি এবং ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে ৩টি নির্দেশক। এ পরিকল্পনা মূল্যায়নের জন্য ১০৪টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১০ বছর বাকি থাকলেও করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মিডটার্ম ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ অব দ্য এইটথ ফাইভ-ইয়ার প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ প্রসঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদনটি তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদের সঙ্গে। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পনাটি যখন তৈরি করা হয়, তখন অনেক বিষয়ই ছিল না। যেমন করোনা ছিল না। পরবর্তী সময়ে করোনা মহামারির বিষয়টি ছোট আকারে বিবেচনায় আসে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাব পালটে দেয়। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে সার আমদানি ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যশস্য আমদানি ব্যাহত হয়। পাশাপাশি স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যায়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ডলারের দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের আমদানি খরচ বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিছু লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে এতকিছুর পরও দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্য আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এছাড়া এ পরিকল্পনায় যেসব লক্ষ্য অর্জন হবে না, সেগুলো নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চিন্তা করা হবে। কেননা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে যেতে হলে আর মাত্র তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা পাওয়া যাবে। তাই নবম পরিকল্পনাটি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

অফট্র্যাকে থাকা নির্দেশকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২১টি হচ্ছে জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ একটি। রাজস্ব আদায়, জিডিপির তুলনায় সরকারি ব্যয়, আমদানি, প্রবাসী আয়, ব্রড মানি (ব্যাপক মুদ্রা), বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈষম্য কমানোর (আয়) বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত। আরও আছে-পাঁচবছরের নিচে শিশু ও জাতীয় মৃত্যুহার কমানো, প্রত্যাশিত গড় আয়ু, মোট জন্মহার, শিক্ষার স্তর অনুসারে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসহ শিক্ষকদের অনুপাত এবং কর্মরত ব্যক্তিপ্রতি প্রকৃত জিডিপির বার্ষিক বৃদ্ধির হার। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীদের কাজের মূল্যায়ন, মোট ভূমির তুলনায় বনভূমি বৃদ্ধিকরণ, শহরের বায়ুদূষণ কমানো, প্রতি ১০০ জন মানুষের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার ও গতি বাড়ানো এবং জনসংখ্যা অনুপাতে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়াদের আইনগত সহায়তার প্রাপ্তির হারও এতে রয়েছে।

পরিকল্পনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্দেশকভিত্তিক অগ্রগতি কম থাকলেও সার্বিকভাবে এ পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন খারাপ নয়। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। দারিদ্র্য হ্রাস করতেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং রশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও পরিকল্পনাটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। ২০২০ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশে। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’

এদিকে প্রতিবেদন অনুযায়ী অনট্র্যাকে (সঠিব পথে) থাকা নির্দেশকগুলো হলো-দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়, রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা, দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক নিরাপত্তা, ভোগবৈষম্য কমানো, শিশুসহ সব বয়সের মানুষের টিকাদান, জন্মগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশ সেবা গ্রহণ। এছাড়া নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, জিডিপির তুলনায় শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়, মেট্রোরেল নেটওয়ার্কে থাকা, হাইওয়ের ব্যবহার, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ২ কিলোমিটারের মধ্যে অলসিজন রোডের ব্যবহার, দারিদ্র্যসীমার নিচের ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর পারিবারিক মাথাপিছু আয় ও ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা অনট্র্যাকে আছে। তবে ইতোমধ্যেই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জন হয়েছে।

LEAVE A REPLY