ভালোবাসায় ফাটল ধরাতে পারে সন্দেহের ঘুণপোকা। ঈর্ষা আর অধিকারবোধের বাড়াবাড়ি দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না, এমন অমূলক সন্দেহ কখনো কখনো রোগের পর্যায়ে চলে যায়। প্রেম-ভালোবাসা বা দাম্পত্য সম্পর্কে সঙ্গী-সঙ্গিনীর ব্যাপারে অহেতুক, অস্বাভাবিক সন্দেহ আর ভ্রান্ত বিশ্বাসজনিত এক ধরনের মানসিক রোগ হচ্ছে ‘ওথেলো সিনড্রোম’। বিশ্বখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি ‘ওথেলো’-এর মূল চরিত্র ওথেলো নানা ঘটনায় স্ত্রী ডেসডিমনা পরকীয়ায় জড়িত বলে সন্দেহ করে এবং সন্দেহের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে।
পরবর্তী সময়ে জানা যায়, তার সন্দেহ অমূলক ছিল। সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অমূলক সন্দেহের এই মানসিক সমস্যার নামকরণ করেন দুই ইংরেজ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। রোগের অবস্থাটিকে প্যাথলজিক্যাল জেলাসি, মরবিড জেলাসি, সেক্সুয়াল জেলাসি বা ডিল্যুশন অব ইনফিডেলিটিও বলা হয়।
রোগের লক্ষণ
আক্রান্ত ব্যক্তির নানা আচরণ ও কথায় এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সঙ্গী বা সঙ্গিনীর বিশ্বস্ততা ও আচরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। ফোনের কল ও মেসেজ চেক করেন বা দেখাতে বাধ্য করেন। কার সঙ্গে কথা বলে, তা নিয়ে বারবার জেরা করেন। ফোন বা ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বাধা দেন।
অনেকে সঙ্গীকে গোপনে অনুসরণ করেন, হঠাৎ করে তাঁর কর্মস্থলে উপস্থিত হন, সঙ্গী বাসায় ফেরার পর কাপড় ও শরীর নানাভাবে পরীক্ষা করেন অন্য সম্পর্কের প্রমাণ খুঁজতে। প্রমাণ না পেলেও তাঁদের সন্দেহ দূর হয় না। সঙ্গীর স্বাভাবিক সামাজিক আচরণকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন। বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দেন বা বলতে দেখলে সন্দেহ করেন ও উত্তেজিত হন। উত্তেজিত হয়ে অনেকে সঙ্গীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন।
সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সঙ্গীকে হত্যাচেষ্টা বা হত্যার ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনি আক্রান্ত ব্যক্তিরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান থাকলে সেও বিপদে পড়ে।
রোগের কারণ
ওথেলো সিনড্রোম ঠিক কী কারণে হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বংশগতি, বিকাশ ও পরিবেশের প্রভাবের পাশাপাশি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তা ও ভালোবাসার অভাববোধ এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে দায়ী বলে মনে করা হয়।
চিকিৎসা
ব্যক্তি কেবল ওথেলো সিনড্রোম বা প্যাথলজিক্যাল জেলাসিতে ভুগতে পারেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে, সিজোফ্রেনিয়া, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, যৌন সমস্যা প্রভৃতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝেও এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে উভয় রোগের চিকিৎসা জরুরি। রোগের ধরন ও তীব্রতা ভেদে ওষুধ ও সাইকোথেরাপি—দুভাবেই চিকিৎসা করা হয়। সন্দেহের কারণে ব্যক্তি নিজের বা সঙ্গীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালে কখনো কখনো তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করারও দরকার হতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মুনতাসীর মারুফ
সহযোগী অধ্যাপক
কমিউনিটি ও সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।