১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

সংগৃহীত ছবি

ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ২০২০ সালে এক হাজার ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। তবে প্রকল্পটি অনুমোদনের সাড়ে তিন বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ০.২৮ শতাংশ।

কোনো সমীক্ষা ছাড়াই নেওয়া হয় এত বড় প্রকল্প। অথচ প্রকল্প ৫০ কোটির ওপরে হলেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা থাকা বাধ্যতামূলক।

এখন জনবল সংকটের কথা বলে ৯৩ শতাংশ কাজ বাদ দিয়ে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং কাজ শেষ করতে আরো সময় চাওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব সূত্রে জানা গেছে, ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি সরকারের অর্থায়নে মোট এক হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালের ১৪ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। পরে ২০২১ সালের নভেম্বরে ভূমিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে কোড সংশোধন ও আন্ত অঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, মূল প্রকল্পে আট বিভাগে ৬১টি জেলার ৪৭০টি উপজেলায় দুই লাখ ৬০ হাজার ৩৬৯টি জিওডেটিক কন্ট্রোল পিলার স্থাপনসহ পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ১৪টি উপজেলায় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর দ্বারা পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে সংশোধন প্রস্তাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিজস্ব জনবলের পরিবর্তে বেসরকারি ভূমি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে জরিপকাজ সম্পাদন, প্রকল্প এলাকা কমিয়ে ৬১টি জেলার ৪৭০টি উপজেলার পরিবর্তে পাঁচ জেলার ৩২টি উপজেলায় পিলার স্থাপন ও পূর্বের ১৪টি এবং নতুন ১৮ উপজেলায় ডিজিটাল সার্ভে কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অথচ এত কাজ কমিয়ে প্রকল্প খরচ মাত্র ১৭ কোটি আট লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব দিয়ে প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

গত ৩ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় এই প্রকল্প বাদ দিয়ে নতুন করে প্রকল্পটি নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রকল্পটি সংশোধনের বিষয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তুলসী রঞ্জন সাহা সভায় বলেন, করোনা মহামারির কারণে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জনবল সংকটের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, প্রকল্প এলাকা হ্রাস বা বৃদ্ধি, কার্যক্রম পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, বিগত তিন বছরে প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ০.২৮ শতাংশ। মূলকথা প্রকল্পের কোনো কার্যক্রম অদ্যাবধি শুরু করা হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।

এ বিষয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সভাকে অবহিত করেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতিসহ প্রকল্প এলাকা ও প্রকল্প কার্যক্রমের পরিবর্তনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্বের কারণে প্রকল্পের সন্তোষজনক বাস্তবায়ন অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেহেতু বিগত সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পের কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি এবং প্রকল্প এলাকা ও প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেহেতু এর মেয়াদ আরো চার বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয়। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিবর্তে ওই মেয়াদে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করাই সমীচীন হবে। তাই সভায় চলমান প্রকল্পটির কাজ অসমাপ্ত রেখে শেষ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের উপপ্রধান জেসমুন নাহার সভায় বলেন, কিসের ভিত্তিতে প্রকল্প এলাকা ও কার্যক্রমে হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে, আরডিপিপিতে তা সুষ্পষ্ট নয়। তা ছাড়া  প্রকল্পটি গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হয়নি। প্রকল্প এলাকা, কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তনের ফলে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

কার্যক্রম বিভাগের প্রধান আহসান হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি আমূল পরিবর্তন করে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবলের পরিবর্তে বেসরকারি ভূমি জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে জরিপকাজ সম্পাদনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা পরামর্শক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অঙ্গে ব্যয় হবে। বেসরকারি খাতে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে উপযুক্ত জনবল পাওয়া যাবে কি না, তার সম্ভাব্যতা বিষয়েও সমীক্ষা প্রয়োজন।

তাই প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনায় যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাপূর্বক নতুন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করে অবিলম্বে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণের বিষয়ে সভায় একমত প্রকাশ করা হয়।

প্রকল্পটি মাঝপথে শেষ করার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) এ কে এম ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে জানান, সাড়ে তিন বছরে কোনো কাজই হয়নি। এখন প্রকল্পটির ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন এনে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কাজ করতে আরো চার বছর সময় চাওয়া হয়েছে। তাই এটা বাদ দিয়ে নতুন করে প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY