রাজধানীর ২৯ মিন্টো রোডে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবন। ছবি : শেখ হাসান
প্রায় ১২০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের কর্তাদের বসবাসের জন্য রাজধানীর মিন্টো রোডে কয়েকটি বাড়ি তৈরি করা হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে ২৯ মিন্টো রোডের বাড়িটি বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু গত প্রায় ৩০ বছরে কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ওই বাসায় বসবাস করেননি। আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যে কারণে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে আসার পর দুই দফা বাড়িটি বরাদ্দের আবেদন করেও পায়নি।
এবারও ওই বাড়িতে উঠতে চান বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তবে এই অবস্থায় বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
এদিকে ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, সূত্রাপুর, ফরাশগঞ্জ ও রমনা এলাকার পাঁচটি বাড়িকে ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), যার মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতার বাড়িটি রয়েছে। এরপর ২০১২ সালে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হেরিটেজ ভবন ভাঙনে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
ফলে বাড়িটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগও থমকে যায়। আবার বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বাড়িটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বাড়িটি নির্মাণ করে।
এখানে প্রায় আড়াই একর জমি, দোতলা মূল ভবনের প্রত্যেক তলায় চারটি করে কক্ষ। ভবনটি দূর থেকে চাকচিক্যময় দেখা গেলেও ভেতরে জরাজীর্ণ। দেয়ালগুলো স্যাঁতসেঁতে, প্লাস্টার খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে পানিও পড়ে এই বাড়িতে। বেশির ভাগ আসবাব এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে।
১৯৯৬ সালের পর বাড়িটিতে কোনো বিরোধীদলীয় নেতা বসবাস করেননি। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংস্কারে গণপূর্ত বিভাগের উদ্যোগ ছিল না।
এ বিষয়ে ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৭ বছরের বেশি সময় ওই বাড়িতে কেউ বসবাস করছেন না। বাড়িটির অনেক বয়স হয়েছে। দেয়ালের সিমেন্ট ও ছাদ খসে পড়ছে। ফলে বিরোধীদলীয় নেতাকে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সংস্কার না করে সেখানে বসবাস করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর প্রথম বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মিন্টো রোডের ওই বাড়িতে ওঠেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হলেও তিনি ওই বাড়িতে ওঠেননি। তবে তাঁর নামে বরাদ্দ থাকায় তিনি বাড়িটি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতেন। এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বাড়িটি বরাদ্দ পেলেও তিনি ওঠেন ধানমণ্ডির সুধা সদনে।
২০০৯ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হলেও তিনি ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই বাড়িটির জন্য আবেদনও করেননি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তবে ২০১৪ সালে রওশন এরশাদ ও ২০১৯ সালে এইচ এম এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বাড়িটি বরাদ্দে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ভবনটি সংস্কারের অজুহাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দশম সংসদে বিষয়টি অধিবেশনেও তোলা হয়।
বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বাড়িটি বরাদ্দ নিতে চাই। ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি এভাবে ফেলে না রেখে রক্ষণাবেক্ষণে আগেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। সংস্কারের প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাল ভবনগুলো ভেঙে নতুন নকশায় সেগুলো নির্মাণের নির্দেশনা দেন। এই নির্দেশনার পরই স্থাপত্য অধিদপ্তর নকশা প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিরোধীদলীয় নেতার বাড়িটির নতুন নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাছির। কিন্তু কাজ কিছুদূর এগোনোর পর তিনি অবসরে চলে যাওয়ায় সেই কাজ আটকে যায়।