পাকিস্তানের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মরিয়ম

পাকিস্তানের সাত দশকের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নওয়াজকন্যা মরিয়ম নওয়াজ। জোট গঠনের টানাপোড়েনের ইতি টেনে মঙ্গলবার মাঝরাতে সমোঝোতায় আসে দেশটির প্রধান দুই দল। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। ঐকমত্যের পর বুধবার মিটিংয়ে পিএমএল-এনের সিনিয়র সহসভাপতি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়মকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেয়। 

মনোনয়ন পেয়ে ওই দিনই ভাষণ দেন মরিয়ম। লাহোরের বক্তৃতায় পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রকাশের পাশাপাশি দেশের গরিব-দুঃখীর জন্য এক লাখ ঘর তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নেবেন মরিয়ম। ডন। 

ক্ষমতায় গেলে মরিয়মই হবেন পাকিস্তানের সাত দশকের ইতিহাসে প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। পাঞ্জাব প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭০ লাখ। যাদের দায়িত্ব কাঁধে নিতে যাচ্ছেন তিনি। লাহোরে ভাষণে মরিয়ম তার দলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তার নেতৃত্বে পাঞ্জাব প্রদেশে নতুন যুগের সূচনা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার ও দলীয় পর্যায়ে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সে বিষয়ে তার দল ইতোমধ্যেই একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। আরও বলেছেন, প্রদেশটি স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানির একটি বিরাট সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এসব সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যক্ত করে নবনির্বাচিত এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নির্বাচনি এলাকাগুলোর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পাঞ্জাবের ২৯৭টি নির্বাচনি এলাকাকে জেলা হিসেবে দেখতে হবে। 

নারীদের জন্য থানার পরিবেশ উন্নত করতে মডেল নারী থানা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যানজটের সমস্যাও সমাধান করার বিষয়েও জোর দিয়েছেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী-প্রত্যাশী মরিয়ম স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত থেকে শুরু করে প্রদেশের জনগণের কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, আমরা স্বাস্থ্য কার্ড নতুন করে ডিজাইন করব এবং বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিশ্চিত করব। এছাড়াও অবকাঠামো, আইনশৃঙ্খলা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য সব খাতে সমান মনোযোগ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমরা দরিদ্রদের জন্য এক লাখ ঘর তৈরি করব। যুবকদের সুদমুক্ত ঋণ দেব। তরুণ শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়ার জন্য মেধাভিত্তিক বৃত্তি দেব।’ তার বক্তব্য শেষ করার সময়, মরিয়ম তার দল এবং সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে প্রাদেশিক বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাক্রমে নওয়াজ শরিফ এবং পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফের অভিজ্ঞতা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। 

এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টায় পাঞ্জাব বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হয়েছে। পাঞ্জাবের গভর্নর বালিগ উর রহমান এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এ সময় ১৮তম পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির নবনির্বাচিত সদস্যরা প্রাদেশিক আইনসভার উদ্বোধনী অধিবেশনে শপথ নেবেন।
 
অধিবেশনে প্রথমে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবেন আইনসভার সদস্য। তার পরেই  মুখ্যমন্ত্রী। এর পরপরই শপথ। নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্পিকার সিবতাইন খান। পিএমএল-এনের নির্বাচিত সদস্যদের সংসদীয় বৈঠকের একদিন পর বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনের  এ ঘোষণা আসে। 

বিরোধী দল পিটিআই: পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পিটিআই-সমর্থিত প্রায় সব বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীই আনুষ্ঠানিকভাবে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগদান করেছেন। বুধবার নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) অধীনে বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার ডনের খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনে জয়ী জাতীয় পরিষদের ৮৯ জন এমএনএ, খাইবার পাখতুনখাওয়া অ্যাসেম্বলির ৮৫ জন, পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির ১০৬ জন এবং সিন্ধু অ্যাসেম্বলির ৯ জন সদস্য বুধবার নির্বাচন কমিশনে তাদের হলফনামা জমা দিয়েছেন।

জাতীয় পরিষদের ৯৩টি আসন জয়ের দাবি করেছিল পিটিআই। হলফনামা জমা দেওয়ার মাধ্যমে পিটিআইর সেই দাবির প্রমাণ মিলল। তবে দলীয় তিন নেতা ওমর আইয়ুব খান, ব্যারিস্টার গহর খান এবং আলী আমিন গান্দাপুর হলফনামা জমা দেননি। এ ছাড়া, দাওয়ার কুন্দি নামে অন্য এক প্রার্থীর নামে এখনো পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। পিটিআইয়ের আন্তঃদলীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছেন বলে ইচ্ছা করেই এসআইসি সদস্য হওয়ার জন্য হলফনামা জমা দেননি ওমর আইয়ুব এবং ব্যারিস্টার গহর। আর খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য পিটিআইয়ের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হওয়ায় আলী আমিন গান্দাপুরও হলফনামা জমা দেননি। পিটিআই সূত্র বলছে যে, আইয়ুব ও গহর ছাড়া তাদের সমর্থিত সব জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা এসআইসিতে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত দুই সদস্য চৌধুরী ইলিয়াস এবং ব্রিগেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আসলাম ঘুম্মান নিখোঁজ থাকলেও তাদের হলফনামাও ইসিপিতে জমা দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY