চলতি বছরেই হারবে ইউক্রেন?

টানা দুই বছর ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ধারণা করা হয়েছিল খুব সহজেই কিয়েভকে কাবু করে ফেলবে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মস্কো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈদেশিক নানা সহায়তায় রাশিয়ার সঙ্গে বেশ টেক্কা দিয়েই যাচ্ছিল ইউক্রেন। ড্রোন বানানোসহ নিজেদের ছোটখাটো সমরকৌশল কাজে লাগিয়ে যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল কিয়েভ বাহিনী। তবে হঠাৎই টালমাটাল অবস্থায় পড়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সব শহর চলে যাচ্ছে রুশদের দখলে। 

মার্কিন সহায়তা সংকুচিত হওয়ার পর থেকেই এই হাল ইউক্রেনের। অবস্থা এখন এমন যে, ‘আজই’ (যত দ্রুত সম্ভব) ইউক্রেনে অতিরিক্ত সেনা, বৈদেশিক সাহায্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। যদি এমনটি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যাবে ইউক্রেন। দেশটিতে রুশ আগ্রাসনের দুই বছর পূর্তির আগের দিন (বৃহস্পতিবার) এমন চিত্রই উঠে এসেছে এএফপির প্রতিবেদনে।

কংগ্রেস অনুমতি না দেওয়ায় ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র।  গত বছরের ডিসেম্বরে ছয় হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ দাবি করে কিয়েভ। কিন্তু মার্কিন পার্লামেন্টে সেই বিল পাশ হয়নি। এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারছেন না। ফলে বেশ বেগতিক অবস্থায় পড়েছে কিয়েভ সেনাবাহিনী। অন্যদিকে দুই বছর হয়ে গেলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার কোনো লক্ষণই চোখে পড়ছে না। 

বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের দাবি, ২০২৪ যুদ্ধের আরও একটি বছর হবে। কারণ একদিকে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইউক্রেন, অন্যদিকে কিয়েভের সম্পূর্ণ আত্মসমপর্ণ চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। চলতি মাসে ডানপন্থি টকশো আয়োজক, ভাষ্যকার এবং লেখক টাকার কার্সনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন এমন ইঙ্গিত দিতে পারেন যে, তিনি সমোঝোতায় আগ্রহী। যদি রাশিয়া আলোচনায় কোনোক্রমে আগ্রহী হয়ও সেখানে নিজেদের স্বার্থে অসংখ্য শর্ত জুড়ে দেবে মস্কো। সেই শর্ত এতটাই বেশি হবে কিয়েভ সেই আলোচনার মুখোমুখি হতে চাইবে না। এ বিষয়ে মস্কোর ক্রেমলিন-সংযুক্ত কাউন্সিল অন ফরেন অ্যান্ড ডিফেন্স পলিসি থিংকট্যাংকের প্রধান ফিওদর লুকিয়ানভ বলেছেন, ‘আমি শিগগিরই কোনো আলোচনার স্থান দেখতে পাচ্ছি না। তাদের নিয়ে আলোচনা করার মতো কিছু নেই।’ 

২০২২ সালের শীত মৌসুম ছিল পুতিনের জন্য অপমানজনক। কেননা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজধানী কিয়েভকে দখল করতে ব্যর্থ হন তিনি। যদিও এখন তিনি আবারও আগের অবস্থানে ফিরে এসেছেন। ইউক্রেনের ব্যর্থ পালটা আক্রমণে বিষয়টি স্পষ্ট। এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিন অধির অপেক্ষায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের।

নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার সম্ভাবনা এবং ইউরোপের উগ্র ডানপন্থিদের উত্থান- বিষয়গুলো পুতিনকে পুনরুজ্জীবিত করছে। 

জি-২০ সম্মেলনে পশ্চিমা নেতাদের তিরস্কার

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মস্কো। পশ্চিমা নেতারা রাশিয়াকে রীতিমতো তিরস্কার জানাচ্ছে। বুধবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে বিভিন্ন দেশের অসংখ্য কূটনীতিবিদ। রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত জি-২০ অধিবেশনটি মূলত গাজা ও ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে আলোচনায় বসে। দুই দিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও নরওয়ের শীর্ষ কূটনীতিকরা এ বিষয়ে মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘রাশিয়াকে তার আগ্রাসনের মূল্য দিতে হবে।’ 

নরওয়েজিয়ান মন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেনকে তার মাটিতে অন্য সেনাবাহিনী ছাড়া একটি স্বাধীন ও স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সমর্থন করতে হবে।’ জার্মান শীর্ষ কূটনীতিক রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে বলেছেন, ‘আপনি যদি মানুষের জীবনের যত্ন নেন, যদি আপনি আপনার নিজের মানুষ, রাশিয়ান শিশু এবং যুবকদের যত্ন নেন তবে আপনাকে অবশ্যই এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে।’

LEAVE A REPLY