বয়স ৭৬, তবু ১৯তম জন্মদিন মামুনুর রশীদের!

মামুনুর রশীদ

দেশবরেণ্য অভিনেতা মামুনুর রশীদের জন্মদিন আজ। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) এই গুণী অভিনেতা জীবনের ৭৫ বসন্ত পেরিয়ে ৭৬ পা রাখলেন। ১৯৪৮ সালের আজকের দিনেই পৃথিবীর আলো দেখেছেন তিনি। তবে এখনও নিজকে ১৯ বছরের তরুণ বলেই মনে করেন মামুনুর রশীদ।

জীবনে জন্মদিনও পালন করেছেন ১৯ বার। কারণ, লিপ ইয়ারে জন্ম তাঁর। অন্যান্যদের থেকে তাঁর জন্মদিনের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রতি বছর নয়, চার বছর পর পর আসে অভিনেতার এই বিশেষ দিন।

একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক মামুনুর রশীদ।

মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমান তালে কাজ করে দর্শকহৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। ইতোমধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় অভিনয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন এই অভিনেতা। মামুনুর রশীদ তার নাটকে শ্রেণিসংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু তুলে ধরেন। লেখা ও নির্দেশনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন নাট্যজগতে অপরিহার্য একজন।

১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি টাংগাইল জেলার কালিহাতির পাইকড়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ নেন মামুনুর রশীদ। অভিনেতার বাবা হারুনুর রশীদ ডাক বিভাগের একজন সরকারি চাকরিজীবী। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছেন। ঢাকা পলিটেকনিক থেকে পুরকৌশল বিভাগে ডিপ্লোমা করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ও এমএ ডিগ্রি নিয়ে পড়াশুনা সম্পন্ন করেন মামুনুর রশীদ। স্কুলজীবনে অভিনয় করতেন মামুনুর রশীদ।

অভিনয়ের নেশা তখনই তৈরি হয় এই অভিনেতার। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ার সময়ই মামুনুর রশীদ তার প্রথম নাটক লেখেন। নাটকটির নাম— ‘মহানগরীতে একদিন’। তবে অভিনয় পেশা হবে, এমনটা কোনো দিন ভাবেননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাবলেন, অভিনয়টাই জীবিকা হবে তার। ১৯৬৭ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন মামুনুর রশীদ। তবে তার নাটকের বিষয়বস্তু ছিল মূলত পারিবারিক। সেসময় কমেডি নাটকও লিখতেন এই অভিনেতা। নাট্যশিল্পের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা শুরু হয় টাংগাইলে তার নিজ গ্রামে যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে অভিনেতার নিবিড় পরিচয়ের সূত্র ধরে। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং জড়িত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন তার প্রথম রচিত নাটক ‘পশ্চিমের সিঁড়ি’ কলকাতার রবীন্দ্রসদনে মঞ্চায়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতা অর্জন করায় নাটকটি আর তখন মঞ্চায়িত হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মঞ্চায়িত হয় নাটকটি। সেই সময়টাও তার নাট্যচর্চায় প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর শুরু হয় তার আরেক নাট্যসংগ্রাম ‘মুক্ত নাটক আন্দোলন’। ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই মামুনুর রশীদ তৈরি করেন ‘আরণ্যক নাট্যদল’।

মঞ্চে মামুনুর রশীদের উল্লেখিত মঞ্চ ও টিভি নাটকগুলো হলো ‘পশ্চিমের সিঁড়ি’, ‘গন্ধর্ব নগরী’, ‘ওরা কদম আলী’, ‘অববাহিকা’, ‘জয় জয়ন্তী’, ‘সংক্রান্তি’, ‘বনাম রাঢ়াং’, ‘ভঙ্গবঙ্গ’। ধারাবাহিক টিভি নাটকের মধ্যে ‘অলসপুর’, ‘সুন্দরী’ ও ‘মুর্দা ফরেশ’ তুমুল জনপ্রিয়।

২০১২ সালে নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভুষিত হন মামুনুর রশীদের। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা, মাওলানা ভাসানী পুরস্কার, অনীক থিয়েটার সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন।

এদিকে, বর্ষীয়ান এই অভিনেতার জন্মদিন উপলক্ষে ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ আরণ্যকের ‘আলোর আলো নাট্যোৎসব’ হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। উৎসবে থাকবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটকের মঞ্চায়ন, সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী ও থিয়েটার আড্ডা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। এছাড়া দেশ-বিদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও আসবেন অতিথি হয়ে।

LEAVE A REPLY