আগুনে পুড়ল ইতালির স্বপ্ন, অনন্তের পথে পুরো পরিবার

ইতালির গ্রিন কার্ড নিয়ে দেশে ফিরেছেন স্বপ্না আক্তারের স্বামী সৈয়দ মোবারক হোসেন। চলতি মাসের ২৩ তারিখ স্ত্রী স্বপ্নাসহ তিন সন্তানকে নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়ার কথা। স্বপরিবারে ইতালি যাওয়ার সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাঁই হয়েছে রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে। এই ঘটনায় স্বামী, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ পুরো পরিবার নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গ্রিন কেজি কটেজ ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। 

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন (কাউসার) (৪৮), স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪০), তিন সন্তান ফাতেমা তুজ জোহরা (কাশপিয়া) (১৯), সৈয়দা আমেনা আক্তার (নূর) (১৩) ও সৈয়দ আব্দুল্লাহ (৮)।

কাউসারের চাচাতো ভাই সৈয়দ রিয়াদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কাউসার ইতালি প্রবাসী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সে দেশের গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।

পরিবার নিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে গত ২৩ জানুয়ারি কাউসার দেশে ফিরেন। চলতি মাসের ২৩ তারিখ স্বপরিবারে ইতালি যাওয়ার কথা। এই উপলক্ষে দুই সপ্তাহ আগে অন্যান্য চাচাতো ভাইদের সঙ্গে গেট টুগেটারের আয়োজন করেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিবার নিয়ে বেইলি রোডে খেতে গিয়েছিলেন।

আত্মীয়রা জানান, রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ফ্লাটে কাউসের পরিবার বসবাস করত। সেখানে কাউসারের স্ত্রী স্বপ্নার বড় বোনের মেয়ে শোভা থাকতেন। রাত ৮টায় শোভাকে বাসায় রেখে কাউসার তার পরিবার নিয়ে বাইরে যান। এরপর রাত ১২টা পর্যন্ত তারা বাসায় না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন শোভা। তখন তিনি এ বিষয়টি অন্যান্য চাচাতো ভাই ও আত্মীয়দের জানান।

পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কাউসার স্বপরিবারে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপতালে চিকিৎসাধীন। এমন খবর পেয়ে স্বজনরা মধ্যরাতে হাসপতালে ছুটে যান। তবে কাউকে আর জীবিত পাওয়া যায়নি। 

রিয়াদ আরো জানান, হাসপাতলে গিয়ে দেখি লাশগুলো মোটামুটি অক্ষত ছিল। সবার চেহারাই অবিকৃত অবস্থায় পেয়েছি। কারো শরীরে খুব বেশি পোড়া ক্ষত পাওয়া যায়নি। হয়তো আগুনের তাপে বা গ্যাসের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

কাউসার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরের খন্দকার বাড়ির সন্তান। তিনি তিন ভাইয়ের মধ্যে মেঝো। তার একজন বোন আছে। ছোট ভাই ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। বড় ভাই মা ও পরিবার নিয়ে ইতালিতে থাকেন।

স্বজনরা জানান, খন্দকার বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানেই তাদের দাফন করা হবে। দুপুরে তাদের মরদেহ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওয়া দেওয়া হয়েছে।
 

LEAVE A REPLY