ক্রিমিয়া হামলার পেছনে জার্মানি

ক্রিমিয়া হামলার পেছনে রয়েছে জার্মানি। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর এ বন্ধুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবার এই বিস্ফোরক অভিযোগ আনল রাশিয়া। শুধু অভিযোগই নয়, জার্মানির বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন আলোচনার অডিও ফাঁস করে এবার সে কথাই প্রমাণ করল রাশিয়া। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়েই প্রবল বিতর্ক চলছে দেশ দুটিতে। সে আগুনে এবার ঘি ঢালল মস্কো। বিবিসি, আরটি।

শুক্রবার রাশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় জার্মান অফিসারদের আলোচনার ৩৮ মিনিটের একটি রেকর্ডিং পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। যেখানে উচ্চপদস্থ জার্মান সামরিক কর্মকর্তারা টরাস ক্ষেপণাস্ত্র (৫০০ কিলোমিটার দূরে পৌঁছাতে পারে) দিয়ে রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার সেতুতে হামলার পরিকল্পনা করার জন্য যুক্তরাজ্যের সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। 

অডিওতে আরও শোনা যায়, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ইউক্রেনে দূরপাল্লার টরাস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। কিভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার কার্চ সেতুতে (ক্রিমিয়া সেতু) আঘাত হানা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করছেন তারা। কর্মকর্তারা (এয়ার ফোর্স কমান্ডের অপারেশনস অ্যান্ড এক্সারসাইজ ডিপার্টমেন্টের প্রধান ফ্রাঙ্ক গ্রেফ, এয়ার ফোর্স ইনস্পেকটর ইঙ্গো গেরহার্টজ এবং স্পেস কমান্ডের এয়ার অপারেশন সেন্টারের দুই কর্মী) বলেছেন, ১০০টি এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ধাপে স্থানান্তর করা যেতে পারে। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রেকর্ডিং থেকে পরিষ্কারভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষ আলোচনা চলছে। রাশিয়ার রাজনীতিবিদরা বলেছেন, এই অডিও প্রমাণ করে তাদের দেশের সব থেকে বড় শত্রু আগে থেকেই এই হামলার পরিকল্পনা করছিল। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি হেড দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, আমাদের বহু পুরোনো শত্রু নতুন করে আবারও আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে নাৎসি জার্মানির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে এ কথা বলেন। 

তবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ শুরুতে এ বিষটি অস্বীকার করলেও শনিবার বলেছেন, এটি খুবই গুরুতর একটি বিষয়। এ কারণে এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ গোটা ঘটনার তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন ওলাফ। যে কথোপকথন ফাঁস করা হয়েছে, তার মধ্যেও চালাকি করে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে দেশটিতে। 

এদিকে জার্মানির এমন ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় এ নিয়ে দেশটির কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন রাশিয়া। রাশিয়ান সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, অডিও ফাঁসের পর সোমবার জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। ইতোমধ্যেই জার্মান রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রচালিত সংস্থা আরআইএ নভোস্তি।

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। এরপর এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে আজভ সাগরের ওপর দিয়ে তৈরি করে কার্চ সেতু। ২০২২ সালের আগে এ সেতুটিই ছিল ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ায় বাকি অংশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। 

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের শুরুর দিকে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম দিকে রাশিয়া তার বিশাল সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠাতে এই সেতু ব্যবহার করেছে। পরে ক্রিমিয়ার সঙ্গে ল্যান্ড করিডোর স্থাপিত হওয়ার পর থেকে সেনা মোতায়েনের জন্য এককভাবে আর এই সেতুর ওপর নির্ভর করতে হয়নি। 

LEAVE A REPLY