জন্মদিনে আমির খান /অভিনেতা হতে চাননি, তবে তিনিই আজ সেরাদের সেরা

আমির খান

হিন্দি চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় তিনি ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ হিসেবে পরিচিত। বলিউডের সবচেয়ে দক্ষ অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বিগত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বলিউড নামক সাম্রাজ্যকে যিনি সফলতার নৌকায় চড়িয়েছেন বার বার। তিনি আমির খান।

আজ ৫৯ বছরে পা দিলেন এই অভিনেতা।

‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’-এর মাধ্যমে কখনও প্রেমের পাঠ, তো কখনও বা ‘দিল চাহতা হ্যায়’-এর হাত ধরে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তার পাঠ দিয়েছেন আমির! আবার কখনও মঙ্গল পাণ্ডের মতো ঐতিহাসিক চরিত্রেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। থ্রি ইডিয়টসের ছাত্র হয়ে ঘুনে ধরা শিক্ষা ব্যবস্থার দলাই মলাই করে জীবনমুখী হতে উজ্জীবিত করেছেন কোটি শিক্ষার্থীদের। পর্দায় নিজের উপস্থিতির মাধ্যমে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি! আজ আমির খানের জন্মদিন উপলক্ষে আমির খানকে ঘিরে এই প্রতিবেদনে থাকছে তাঁর বলিউডের সফর এবং পারিবারিক জীবনের উপাখ্যান।

1
নব্বইয়ের দশকে আমির খান

বলিউড যাত্রা :
অনেকে এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, আমির খান প্রথমে কিন্তু অভিনেতা হতে চাননি। ১৯৮৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন সিনেমার দুনিয়ার সঙ্গে পারিবারিক যোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর অনিচ্ছার কথা। তবে স্কুলে পড়াকালীন একটিসিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ রূপে বদলে দিয়েছিল। এরপরেই অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ারে এগোতে চান তিনি।

যদিও তাঁর প্রতিভা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহপ্রবণ ছিল তাঁর পরিবার। তবে ধীরে ধীরে বলিউডের সবথেকে বহুমুখী অভিনেতার তকমা ছিনিয়ে নেন তিনি। আজ তিনি সেরাদের সেরা। 

১৯৭৩ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ সিনেমায় প্রথম পদার্পণ। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তাঁর অভিষেক হয় ১৯৮৪ সালের ‘হোলি’তে।

তবে ১৯৮৮ সালে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তাক’ সিনেমার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতি অর্জন করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সফলতার একের পর এক সিড়ি চড়েছেন অনায়াসেই। 

পারিবারিক জীবন:
বলিউডের ছত্রছায়াতেই আমিরের বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা তাহির হুসেন ছিলেন প্রযোজক। আবার কাকা নাসির হুসেনও বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক। এখানেই শেষ নয়, আমিরের তুতো-ভাই মনসুর খানও একজন পরিচালক। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নীরব চলচ্চিত্র ‘প্যারানয়া’তে অভিনয় করেন আমির। আর সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়। কলেজের পরে কাকার সিনেমাতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন ‘রং দে বাসন্তী’ তারকা। ১৯৮৬ সালে রিনা দত্তের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন আমির। তাঁদের দুই সন্তান– জুনাইদ এবং ইরা। ২০০২ সালে অবশ্য আমির-রিনার সংসার ভেঙে যায়। এরপর ২০০৫ সালে ‘লাগান’ সিনেমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আমির। ২০১১ সালে সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেয় তাঁদের সন্তান আজাদ রাও খান।

1
‘ফানা’তে আমির খান

ক্যারিয়ার সেরা সিনেমা : ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমা করেছেন আমির খান যার বেশিরভাগই ব্যবসাসফল ছিল। তবে কিছু সিনেমার জন্য দর্শকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।

থ্রি ইডিয়টস: বলিউডের অন্যতম সেরাসিনেমা এটি। ভক্তদের থেকেও প্রচুর ভালবাসা পেয়েছে সিনেমাটি। সেই সঙ্গে সমালোচকরাও ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।
রং দে বাসন্তী: দুর্দান্ত স্ক্রিনপ্লে তো বটেই, সেই সঙ্গে ভক্তদের মনের গভীরে ছাপ ফেলেছে এই সিনেমার সংলাপও। ৬ জন ভারতীয় তরুণ-তরুণীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গল্প। এক বিদেশিনীকে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর তথ্যচিত্র বানাতে সাহায্য করতে দেখা যায় তাঁদের।
তারে জামিন পার: সর্বকালের সেরা সিনেমার মধ্যে অন্যতম ‘তারে জামিন পার’। আট বছরের এক নাবালককে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গল্প। সেখানেই শিক্ষকের ভূমিকায় কামাল করেছেন অভিনেতা।
দঙ্গল: বিশ্বের ৩০তম সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা। ২০১৬ সালের এই সিনেমাটির গল্পে ফুটে উঠেছে প্রাক্তন কুস্তিগীর মহাবীর সিং ফোগট এবং তাঁর কন্যাদের জীবনযুদ্ধের আখ্যান।
পিকে: রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘পিকে’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে। এক ভিনগ্রহের প্রাণী আটকে পড়েছেন পৃথিবীতে। তাঁকে ঘিরেই এই সিনেমার কাহিনী।
দিল চাহতা হ্যায়: ২০০১ সালে হিন্দিতে বেস্ট ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার জিতেছে এইসিনেমা। কলেজ পাশ করে বেরোনো ছোটবেলার তিন বন্ধুকে ঘিরে আবর্তিত হয় সিনেমার গল্প।
আন্দাজ আপনা আপনা: কালজয়ী ক্লাসিক কমেডি সিনেমার তকমা লাভ করেছে ‘আন্দাজ আপনা আপনা’। এই সিনেমার জন্য প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছেন আমির এবং সালমান খান।
ফানা: কুণাল কোহলি পরিচালিত এইসিনেমাতে দেখা গিয়েছিল আমির খান এবং কাজকে। পর্দায় তাঁদের রসায়ন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
রাজা হিন্দুস্তানি: রোম্যান্টিক ড্রামা এইসিনেমাতে ট্যাক্সিচালক রাজার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল আমির খানকে। তাঁর বিয়ে হয় এক ধনী কন্যার সঙ্গে। এই সিনেমাটি ভারতীয় বক্স অফিসে ব্লকবাস্টারের তকমা পেয়েছে।
তালাশ: দ্য আনসার লাইজ উইদইন: ২০১২ সালের সেরা আয়কারীসিনেমার মধ্যে অন্যতম এটি। পুলিশ অফিসার সুরজান শেখাওয়াত এবং একটি হাই-প্রোফাইল খুনের মামলাকে ঘিরে আবর্তিত হয় গল্প।

1
‘গোলাম’-এ রানি মুখার্জির সঙ্গে আমির খান

২০২২ সালের ‘লাল সিং চাড্ডা’র ব্যর্থতার পরে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছেন আমির খান। তবে সম্প্রতি নিজের ফেরার কথা জানিয়েছেন অভিনেতা। তাঁর প্রযোজনা সংস্থা আমির খান প্রোডাকশনস এখন দু’টি নতুন প্রজেক্টে কাজ করেছে। এর মধ্যে একটি হল ‘লাপাতা লেডিজ’ যা মুক্তি পেয়েছে। এটি পরিচালনা করেছেন আমিরের সাবেক স্ত্রী কিরণ রাও। অন্য প্রজেক্টটি হল ‘লাহোর ১৯৪৭’। রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত এই সিনেমাতে দেখা যাবে সানি দেওল, অভিমন্যু সিং, প্রীতি জিন্তা এবং শাবানা আজমিকে। এছাড়া ‘সিতারে জামিন পার’ দিয়ে সরাসরি পর্দায় ফিরছেন আমির খান। সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে শিগগিরিই।

LEAVE A REPLY