নাট-বল্টু উধাও, ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

রেললাইনের স্লিপার থেকে নাট-বল্টু ও ডগপিন উধাও। পাথর সরে গিয়ে নাজুক হয়ে পড়েছে রেললাইন। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় যেকোনো ট্রেনের লাইনচ্যুত বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যেই রাজধানীর কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর রেলপথে চলছে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন।

নাট-বল্টু উধাও, ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পথে রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান রেললাইন পরিবর্তন করা হবে। এর পরও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে।

জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।

সরেজমিনে ঘুরে ওই রেলপথে ঢাকা-গাজীপুর অংশের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর জংশনের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, পুরো রেলপথের বিভিন্ন স্থানে অনেক স্লিপারে ক্লিপ ও ডগপিন নেই। অনেক স্থানে রেলের ফিশপ্লেটে নেই নাট-বল্টু। যেসব পিন ও নাট রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগ মরিচায় নষ্ট।

জয়দেবপুর জংশনসংলগ্ন লেভেলক্রসিং এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই স্থানে রেলপয়েন্ট তিনটি।

সব কটির নাট-বল্টু ও ফিশপ্লেট ঢিলা। অনেক পয়েন্টে স্লিপারে ক্লিপ ও ডগপিন নেই। কোনোটার নাট-বল্টু ও ডগপিন মরিচা ধরে ক্ষয় হয়ে কোনো রকমে লেগে আছে। অনেক স্থানে পর পর তিন-চারটি স্লিপারের একটিতেও ডগপিন বা ক্লিপ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বলেন, রেলপথে পয়েন্ট এরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ পয়েন্টের মাধ্যমে ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইন প্রবেশ করে। পয়েন্টের নাট-বল্টু বা ক্লিপ না থাকলে যেকোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

স্থানীয় লোকজন বলে, প্রায়ই যন্ত্রাংশ খুলে যায়। সময়মতো মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমনটি হতে পারে। এ ছাড়া প্রায়ই যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। 

টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডাবল রেলপথ। পুরনো লাইনটি আপ এবং গত বছর নির্মিত নতুন লাইনটি ডাউন লাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি স্লিপারে ছয়টি ক্লিপ থাকার কথা। টঙ্গীর বনমালা লেভেলক্রসিংসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আপ লাইনের বহু স্লিপারে ক্লিপ নেই। বিশেষ করে ২৯৮/৫ নম্বর মাইলস্টোন এলাকার পর পর ১০টি স্লিপারের কোনোটিতে একটি ক্লিপও নেই। কোনোটিতে আছে মাত্র দু-তিনটি।

বনমালা লেভেলক্রসিংয়ের উত্তর পাশে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ স্লিপারের ফিশপ্লেট ঢিলা। অনেক ফিশপ্লেটে ডগপিন নেই। আবার কোনোটির ডগপিন থাকলেও ক্ষয় হয়ে স্লিপারে কোনোমতে লেগে আছে। টঙ্গীর বউবাজার, টঙ্গী স্টেশন, টঙ্গী লেভেলক্রসিং, ধীরাশ্রম ও ছোট দেওড়া এলাকায় আপ লাইনে স্লিপারে অসংখ্য ক্লিপ নেই।

রেলযাত্রী গাজীপুর শহরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, রেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি হয়, খুলে পড়ে থাকে। কিন্তু সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এমনকি থানায় অভিযোগ জানানো হয় না। তদারকির অভাবে রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে নাজুক পয়েন্টগুলো। এতে প্রায়ই ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হচ্ছে। ঢাকা-জয়দেবপুর রেলপথ হয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ আন্ত নগর মিলিয়ে প্রতিদিন ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে রেলপথ ঝুঁকিমুক্ত করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের টঙ্গীর ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, রেলপথে কোনো সমস্যা নেই। হঠাৎ দু-একটি ক্লিপ-পিন চুরি হয়ে থাকতে পারে। নিয়মিত লাইন পরিদর্শন ও মেরামত করা হয়।

তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে টঙ্গীতে আছেন। এ সময়ের মধ্যে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র দুটি। গত ২৫ মে টঙ্গীতে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেনের একটি বগি এবং গত ১৭ জানুয়ারি সকালে জয়দেবপুর স্টেশনে তুরাগ ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর বাইরে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের বনখরিয়ায় হাওর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। এটি ছিল নাশকতা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, এই পথে রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান রেললাইন পরিবর্তন করা হবে। তবু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলমান আছে।

LEAVE A REPLY